সন্ধান২৪.কম প্রতিবেদকঃ সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সোসাইটির একজন সাবেক কর্মকর্তা একটি আপত্তি ও অপ্রীতিকর শব্দ ব্যবহার করলে তোপের মুখে পড়েন আয়োজকরা। পরে সংগঠনের কর্মকর্তারা আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাইলে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
গত ১১ সেপ্টেম্বর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসে বাংলাদেশ সোসাইটির সুবর্ণ জয়ন্তী পালন উপলক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এই ঘটনা ঘটে।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠের পর উপস্থিত সাংবাদিকরা বিভিন্ন প্রশ্ন করতে থাকেন। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক সোসাইটির কবর কেনা, কমিউনিটি ভবন কেনাসহ নানা অনিয়ম নিয়ে প্রশ্ন করেন।
এক পর্যায়ে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশ সোসাইটি যে ভবন ক্রয় করতে যাচ্ছে সেটি কারো নামে ক্রয় করা হবে, না সংগঠনের নামে ?
এই প্রশ্নের সম্পূরক হিসেবে সাংবাদিকরা জানতে চান, যে ভবন কেনা হবে সেটি কি বর্তমান ভবনটি বিক্রী করে কেনা হবে ? নতুন ভবনের আয়তন ও গঠন কেমন হবে ?
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে গিয়ে সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম, জেষ্ঠ্য সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন দেওয়ান ও সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ আলী বলেন,যেহেতু এটি একটি গুরত্বপূর্ণ প্রশ্ন তাই আমারা পরবর্তী যে কোন এক সময়ে আপনাদেরকে (সাংবাদিক) ডেকে এর উত্তর দেব। এ সময় তারা শুধুমাত্র সুবর্ণ জয়ন্তী উপলক্ষে প্রশ্ন করার জন্য সাংবাদিকদের অনুরোধ করেন। এর পরেও সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ নতুন ভবন কেনার ব্যাপারে বিস্তারিত ব্যাখা দেন এবং বলেন এ ব্যাপারে ভবিষ্যতেও বসা হবে। এর পর বিষয়টি এখানেই শেষ হয়ে যায়। কিন্ত বিপত্তি ঘটে ডা. ওয়াদুদ ভূঁইয়ার বক্তব্যের সময়।
সংবাদ সম্মেলনের মাঝ পথে সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্য ডাক্তার ওয়াদুদ ভূঁয়ার আপত্তিকর বক্তব্যের কারণে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়।
যদিও সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ ও সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেয়ার বাহিরে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেয়ার কোন রীতি-নীতি বা অন্য কোন বক্তব্য দেয়ার কোন সুযোগ থাকে না।
সংবাদ সম্মেলনের সমস্ত প্রটোকল ভেঙ্গে ওয়াদুদ ভূঁইয়া তার শুভেচ্ছা বক্তব্য দিতে গিয়ে বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটি যে ভবন ক্রয় করতে যাচ্ছে সেটি কারো নামে ক্রয় করা হবে,না সংগঠনের নামে হবে,এটি স্টুপিডের ( Stupid ) মত প্রশ্ন করা হয়েছে। ওয়াদুদ ভূঁইয়া ‘স্টুপিড’ বলার পরেই সাংবাদিকদের মধ্যে তুমুল উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। শুরু হয় হৈ-হট্টগোল,চিল্লা-চিল্লি। প্রবল প্রতিবাদের মুখে পড়তে হয় আয়োজকদের। এ সময় কয়েকজন সাংবাদিক ক্ষিপ্ত হয়ে তেড়ে যান কর্মকর্তাদের বসে থাকা মঞ্চের দিকে। এবং এই বক্তব্য প্রত্যাহার করতে বলেন।
এ সময় সাংবাদিকরা প্রশ্ন করতে থাকেন, ৫০ বছর আপনারা কি করেছেন ? বছরের পর বছর মামলা,ব্যক্তিগত কুৎসা রটনা, ক্ষমতার দ্বন্দ্ব, কমিটির মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করে সোসাইটির ভাবমূর্তিকে ধংস করেছেন। কমিউনিটির মধ্যে সোসাইটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছেন। বিভিন্ন অনিয়ম ও দূর্র্নীতি করে সোসাইটির অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিয়েছেন।
এমন প্রচন্ড তোপের মুখে পড়ে পরিস্থিতি শান্ত করতে সোসাইটির কর্মকর্তারা বারবার ক্ষমা চান। এসময় মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান শাহনেওয়াজ বলেন, বাংলাদেশ সোসাইটির ক্রয় করা ভবনটি কার নামে হবে, না সংগঠনের নামে হবে ? সাংবাদিকদেও এই প্রশ্নটি করা ঠিক ছিল। এটি জানতে চাওয়ার অধিকার তাদের আছে।
একটি ভিডিওতে দেখা যায়,বার বার হাতজোড় করে ক্ষমা চাচ্ছেন, আতাউর রহমান সেলিম,মোহাম্মদ আলী,মোহাম্মদ হোসেনসহ বেশ কয়েকজন।
এরপর সংগঠনের সভাপতি আতাউর রহমান সেলিম আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্ষমা চাইলে উত্তপ্ত পরিবেশ শান্ত হয়।
এই ঘটনার পর সোসাইটির সাবেক কর্মকর্তা নাসির খান পল তার ফেসবুকে মন্তব্য করেন, ‘বাংলাদেশ সোসাইটি মানেই হট্টগোল , মারপিট, এরেষ্ট ও বিশিংখলা। আজ অবদি এই কমেটি যত অনুষ্ঠান করেছে সব টায় একই অবস্থা। what’s your problem???’ এর উত্তরে Nizam Uddin মন্তব্য করেন, ‘অযোগ্য মানুষের সমাহার!’
এ ব্যাপারে সন্ধান২৪.কম‘র প্রতিনিধিকে একজন ফোনে কৌতুক করে ‘স্টুপিড’ শব্দের ব্যাখা করেন। তিনি বলেন, স্টুপিড ( Stupid ) শব্দের অর্থ হলো বোকা বা মূর্খ বা চিন্তা না করে কিছু করা বা বলা। অথবা অসম্মানজনক ভাবে কথা বলা।
তিনি বলেন,বোকার মত প্রশ্ন করা বা কখনো কখনো অপমান করার জন্যও স্টুপিড শব্দটি ব্যবহার করা হয়।
তিনি মজা করে বলেন, স্টুপিডদের সাথে কখনো ডিবেটে যাবেন না, কারণ তারা লজিক মানে না, এদের সাথে আপনি জিততে পারবেন না। জিতেও লাভ নেই, কারণ পরে তারা আরো ভয়ংকরভাবে প্রতিশোধ নিবে। শুয়োরের সাথে ফাইট করলে আপনার নিজের গায়েই কাদা লাগবে, কারণ শুয়োর একটা জঘন্য নোংরা প্রাণী, আর শুয়োরটাও চায় আপনার গায়ে কাদা লাগুক, যেন আপনি তার কাতারে নেমে আসেন।
এদেরকে সরাসরি দোষারোপ না করে, প্রশ্ন করুন। “তুমি ভুল বলেছে” এইভাবে না বলে, “তুমি কেন এরকমটা ভাবো” এইভাবে বলতে পারেন, তখন এরা চিন্তায় পড়ে যাবে, আর আপনি রিল্যক্সে থাকবেন।
মনে রাখবেন, সবাই স্টুপিড, আপনিও কারো কাছে স্টুপিড।আবার কিছু লোক আছে স্টুপিড না, কিন্তু মাঝেমধ্যে মানুষ হতাশা কিংবা অপ্রস্তুত অবস্থায় স্টুপিডের ন্যায় আচরণ করে। তাই সবসময় সবার সাথে বিনয়ের সাথে আচরণ করুন এবং সতর্ক থাকার চেষ্টা করুন।
সবার কাছ থেকেই কিছু না কিছু শিখার আছে, এমনকি স্টুপিডদের কাছ থেকেও| তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এদেরকে এড়িয়ে যাওয়াই ভাল।
আগামী ২ নভেম্বর নিউইয়র্কের বিখ্যাত কনভেনশন হল টেরেস অন দা পার্কে, অনুষ্ঠিত হবে সুবর্ণজয়ন্তীর মহা-উদযাপন। বিকেল ৪টা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলবে এই অনন্য আয়োজন।
সংবাদ সম্মেলনে সোসাইটির সাবেক ও বর্তমান কর্মকতা,ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য এবং সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন কমিটির সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন আজমল হোসেন কুনু,মোহাম্মদ হোসেন,ফখরুল ইসলাম প্রমূখ।