দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত, যাদের বেশিরভাগই কর্মজীবন শেষে কোনো আর্থিক সুবিধা পান না। তাদের একটি বড় অংশ নামমাত্র বেতনে কাজ করেন। এসব স্বল্প আয়ের মানুষের জীবনের শেষদিকের দিনগুলো কতটা আর্থিক সংকটে কাটে, তা সহজেই অনুমেয়।
এ প্রেক্ষাপটে সরকারের সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর বিষয়টি প্রশংসার দাবি রাখে। উন্নত দেশে জনকল্যাণে রাষ্ট্র যেসব পদক্ষেপ নিয়ে থাকে, তার মধ্যে সর্বজনীন পেনশন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। জানা গেছে, আমৃত্যু পেনশন সুবিধার বিধান রেখে দেশে প্রণয়ন করা হয়েছে ‘জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ আইন ২০২২’-এর খসড়া।
এ স্কিমে অংশ নিতে পারবেন ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সি বাংলাদেশি নাগরিকরা। প্রবাসী বাংলাদেশিরাও এ সুযোগ নিতে পারবেন। সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু হলে আশা করা যায়, সঞ্চয়ের প্রতি মানুষের মনোযোগ বাড়বে। জানা গেছে, প্রাথমিকভাবে স্বেচ্ছায় সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হওয়া যাবে। একজন অংশগ্রহণকারী ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার পর মাসিক পেনশন পাওয়ার যোগ্যতা অর্জন করবেন।
একজন কর্মক্ষম ব্যক্তির ধারাবাহিকভাবে ১০ বছর চাঁদা দেওয়ার ক্ষেত্রে বড় ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার কথা নয়। কিন্তু আলোচ্য প্রকল্পে চাঁদাদাতার বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই শর্ত পূরণে নানা ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কা প্রবল। আমাদের দেশে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বেশি বয়সি কর্মীরা চাকরি হারালে তাদের নতুন চাকরি পাওয়া কঠিন হয়ে দাঁড়ায়।
এ কারণে অনেকের পক্ষেই বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হওয়ার আগে উল্লিখিত শর্ত পূরণে জটিলতা সৃষ্টি হতে পারে। এমন পরিস্থিতির শিকার ব্যক্তিদের মাসিক চাঁদা সরকারের পক্ষ থেকে অনুদান হিসাবে দেওয়ার ব্যবস্থা থাকা দরকার। তবে অনুদান নিয়ে যাতে স্বজনপ্রীতি ও দুর্নীতির অভিযোগ না ওঠে, সেদিকে কর্তৃপক্ষকে বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে।
দুর্নীতির কারণে সরকারের বহু মহৎ উদ্যোগের সুফল দেশের প্রান্তিক মানুষ ঠিকমতো পান না। এ অবস্থায় সর্বজনীন পেনশনের মতো মহৎ ও যুগান্তকারী এ পদক্ষেপকে দুর্নীতিমুক্ত রাখতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে হবে। সরকারি কর্মীদের পেনশনপ্রাপ্তি নিয়ে ভোগান্তির বিষয়টি বহুল আলোচিত।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের ক্ষেত্রে যাতে এমনটি না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে। বিপুলসংখ্যক দরিদ্র জনগোষ্ঠীর এই দেশে এ পেনশন স্কিম বাস্তবায়নের কাজ সুচারুভাবে সম্পন্ন করা বড় এক চ্যালেঞ্জ। এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় কর্তৃপক্ষের সার্বিক সাফল্য কামনা করছি আমরা।