সন্ধান২৪.কম: নিউইয়র্কে এক শোক সভায় আমৃত্যু ছায়নটের সভাপতির দায়িত্ব পালন করা সনজীদা খাতুনকে ছায়ানটে কথায়,গানে,নিরবতা পালন,মোমবাতি প্রজ্জ্বলের মধ্য দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়।
গত ২৬ মার্চ সন্ধায় নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের চ্যানেল আই কার্যালয়ে এই শোক সভার আয়োজন করে সম্মিলিত বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা উপযাপন পরিষদ, নিউইয়র্ক।
অনুষ্ঠানের শুরুতে বাঙালি সাংস্কৃতিক আন্দোলনের অন্যতম পুরোধা, ছায়ানটের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও সভাপতি সন্জীদা খাতুনের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে নিরবতা পালন করা হয়। এরপর ফরিদা ইয়াসমিনের নেতৃত্বে প্রদীপ প্রজ্জ্বলনের মধ্য দিয়ে ‘ আগুনের পরশমণি ছোঁয়াও প্রাণে’সহ দুটি গান সেখানে পরিবেশন করেন বাংলাদেশ একাডেমি অব ফাইন আর্টস,বাপা‘র শিল্পীরা।
স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কন্ঠযোদ্ধা ও একুশে পদকপ্রাপ্ত রথীন্দ্রনাথ রায়ের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নেন মুক্তিযোদ্ধা সুব্রত বিশ্বাস, সম্মিলিত বর্ষবরণ মঙ্গল শোভাযাত্রা উপযাপন পরিষদ, নিউইয়র্ক‘র সদস্য সচিব মুজাহিদ আনসারী, ড. ওবায়দুল্লাহ মামুন,ফরিদা ইয়াসমিন,গোপাল স্যানাল,জাকির হোসেন বাচ্চৃ প্রমূখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সনজীবন কুমার।
রথীন্দ্রনাথ রায় বলেন,সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল বাতিঘর নিভে গেল। তিনি তার অন্তরের আলো দিয়ে অজস্র প্রাণে আলো জ্বেলেছিলেন, সেটা তো ছড়িয়ে পড়ছে চারদিকে। তিনি প্রগতিশীল চর্চা ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। এবং তিনি সবসময় আদর্শের প্রতি অনুগত ছিলেন। বিন্দুমাত্র তিনি তার সাথে আপোষ করেননি।’
সুব্রত বিশ্বাস বলেন, সন্জীদা খাতুন সাংস্কৃতিক অঙ্গনে যে অবদান রেখেছেন, তা অত্যন্ত কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করি।বাঙালি সংস্কৃতি ঘরে ঘরে পৌঁছে দেওয়ার জন্য কাজ করেছেন সন্জীদা খাতুন। এই সমাজে যা ঘটছে, যে অরাজকতা চলছে, তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতেন।
ওবায়দুল্লাহ মামুন বলেন , আমাদের সময়ে সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে সবচেয়ে উজ্জ্বল মানুষ ছিলেন সন্জীদা খাতুন। তিনি সব সময় তাঁর আদর্শে অটুট ছিলেন। বিন্দুমাত্র আপস তিনি করেননি।
ফরিদা ইয়াসমিন বলেন,গানের মধ্যেই তিনি জীবনের অর্থ খুঁজে পেয়েছেন। তিনি বাঙালি সংস্কৃতির মূর্ত প্রতীক। বাঙালি জাতির গর্ব।
গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বয়স হয়েছিল ৯১ বছর।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা ও জাতীয় অধ্যাপক কাজী মোতাহার হোসেনের মেয়ে সন্জীদা খাতুনের জন্ম ১৯৩৩ সালের ৪ এপ্রিল। সন্জীদা খাতুন পড়াশোনা করেছেন কামরুন্নেসা স্কুল, ইডেন কলেজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং শান্তি নিকেতনের বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতক ও রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর করে ১৯৭৮ সালে সেখান থেকেই পিএইচডি করেন। দীর্ঘদিন অধ্যাপনার পর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগ থেকে তিনি অবসর নেন।
সন্জীদা খাতুনের লেখার একটি বড় অংশ জুড়ে আছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্যাপক পরিসরে জনমানসে কবিগুরুকে পৌঁছে দেওয়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে তার। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী থাকা অবস্থায় শুদ্ধ সংগীতের চর্চার পাশাপাশি বাহান্নর ভাষা আন্দোলনের সক্রিয় ছিলেন সন্জীদা