এস কে সরকার : গত ২৩ জুন নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেট জেনারেল তাদের নিজস্ব কার্যালযে বাংলা নববর্ষ ও রবীন্দ্র-নজরুল জয়ন্তীর আয়োজন করে।
এই অনুষ্ঠানে দেশ-বিদেশের অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন। আয়োজনে ছিল আলোচনা,কবিতা আবৃত্তি,সঙ্গীত ও নৃত্য। সব শেষে নৈশ ভোজ।
এই অনুষ্ঠানের একটি গানকে কেন্দ্র করে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ তোলপাড় সৃষ্টি করেছে। অনেকেই অনুষ্ঠানের গ্রহনযোগ্যতা নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে মতামত দিচ্ছেন। তবে ফেসবুকে বেশী ভাগ মন্তব্যই বিতর্কের সৃষ্টি করেছে,আয়োজনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে।
গানটি হলো -“তুমি বন্ধু কালা পাখি,আমি যেন কি? বসন্ত কালে তোমায় বলতে পারিনি। পিরিত ভালা গলার মালা,বললে কি আর হয়,যারে ভালো লাগে আমার দেখলে তারে চোখে নেশা হয় রে বন্ধু চোখে নেশা হয়।“
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই গানটির ভিডিও প্রকাশ করে বিশিষ্ট সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও নাট্যজন লুৎফুন্নাহার লতা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের নিজস্ব পেজে লুৎফুন্নাহার লতা মন্তব্য করেছেন “বাংলাদেশের বিখ্যাত শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নী।’
ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে মুন্নি গান গাইছে- ‘তুমি বন্ধু কালা পাখি,আমি যেন কি? বসন্ত কালে তোমায় বলতে পারিনি।’
মুন্নীর গানের সাথে সাথে উপস্থিত অনেককে গলা মিলিয়ে,হাতে তাল রেখে এবং গান করতে শোনা গেছে। দুই একজন হালকা তালে নেচেছে বলেও জানা গেছে।
গানটি ফেইসবুকের মাধ্যমে ব্যপকভাবে প্রচারিত হচ্ছে। ‘সাদা সাদা কালা কালা’ গানটি শুনে লুৎফুন্নাহার লতার পেজে অনেকেই মন্তব্য করেছেল। প্রতিটি মন্তব্যই কটাক্ষের সুরে লেখা হয়েছে।
সুলতান মাহমুদ লিটন ব্যঙ্গ করে মন্তব্য করেছেন : ”সুন্দর একটি রবীন্দ্র সংগীত শুনছি।”
তৈহিদ রেজা নুর : লতা আপা, রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তী? তাহলে এই গান কেন?
সমীরণ বড়ুয়া মন্তব্য : আপা .. এটা কি রবীন্দ্র সংগীত নাকি নজরুল গীতি ঠিক জানি না ! বলবেন কি?
সুপ্রীতি ধর লিখেছন : রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তীতে এই গান???? আশ্চর্য তো। এর উত্তরে আলাউদ্দিন আল আজাদ বলেছেন-আসলেই তো দিদি! রবীন্দ্রনাথের গানের অভাব আছে? রবীন্দ্র সঙ্গীতের উপরে কিছু আছে?
ক্যাটরিনা কেয়া রোজারিও এভাবে মন্তব্য করেছেন : লতা’পা আপনার এ ভিডিওটি না বলেও কত্ত কথা বল্লো! আকলমান্দ কি লিয়ে ইশারাই কাফি!
ক্যাটরিনা কেয়া রোজারিও লেখার উত্তরে শেলী শামস লিখেছে, অবাক লাগলো!
রবীন্দ্র নজরুল জয়ন্তীতে শ্রদ্ধেয় রবীন্দ্র -নজরুল সংগীতের শিল্পীদের আমন্ত্রণ না জানিয়ে এ কেমন “বিখ্যাত” শিল্পীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে, বুঝলাম না ও আর “বিখ্যাত” শিল্পী কেমন করে “কালা বন্ধুর ” গান ধরে রবীন্দ্র -নজরুলকে শ্রদ্ধা জানাবার মঞ্চে ? মন্তব্য করেছন জেবুুন্নেছা।
তামান্না নিগার তুলি বলেছেন ; বাহ কী সুন্দর নজরুল গীতি হচ্ছে।
মুজাহিদ বিল্লা ফারুকী বলেছেন ঃ এই গানটি এবং তার বিখ্যাত শিল্পীকে জায়েজ করতে সামনে বাংলা নববর্ষের কথাও রাখা হয়েছে। তাহলে আর সমস্যা কোথায়!
আবৃত্তিকার গোপন সাহা অনুষ্ঠানের প্রশংসা করে ফেসবুকে তার পেজে লিখেছেন ঃ আবৃত্তি পরিবেশনায় এক মোহনীয় সন্ধ্যা।
গতকাল বাংলাদেশ কনস্যুলেট নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেলের আমন্ত্রণে দেশী বিদেশী সম্মানিত অতিথিদের উপস্থিতিতে আবৃত্তি করলাম কবি কাজী নজরুল এবং কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুরের কবিতা। নজরুল-রবীন্দ্র জয়ন্তী এবং সাথে ছিলো বর্ষবরণ ১৪৩০ আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজন। কনসাল জেনারেল মহোদয় ডঃ মনিরুল ইসলামের স্বাগত বক্তব্যের পর মিলনায়তন পূর্ণ গুনমুগ্ধ দর্শকদের সামনে আমার একক আবৃত্তি পরিবেশনা ছাড়াও নৃত্য পরিবেশন করেন শিল্পী মোনালিসা ও “বাফা”র শিল্পীরা এবং সংগীতে শিল্পী দিনাত জাহান মুন্নি। অনুষ্ঠানে কনসুলেট মহোদয় শিল্পীদের যে সন্মান জানালেন একজন কবিতাকর্মী হিসেবে গভীর সন্মানিত বোধ করছি।
জয় হোক বাংলা সংস্কৃতির, জয় হোক বাঙালির।
রবীন্দ্র-নজরুল দুইজনই তাদের প্রতিভা দিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন বাংলা সাহিত্যকে। কনস্যুলেট এমন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্র-নজরুলকে স্বমহিমায় বিকশিত না করে, উল্টো বিতর্কিত করে তুলেছে-ফেসবুকে এমন অনেক মন্তব্য এসেছে।
রবীন্দ্র-নজরুল জীবিত থাকা অবস্থাতেই- মৌলবাদী হিন্দু এবং মৌলবাদী মুসলিমের নানা ষড়যন্ত্র ও আক্রমণের স্বীকার হতে হয়েছিল। পরবর্তীতে পাকিস্তান আমলেও রবীন্দ্রনাথকে নি:শ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। এখনও বাংলাদেশে রবীন্দ্রনাথের নাম-নিশানা মুছে দেয়ার সব রকম চেষ্টা চালানো হচ্ছে। এখনও বাংলাদেশে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানের প্রেতাত্মারা নানা কৌশলে, অসাম্প্রদায়িক মুক্ত চিন্তার লেখকদের লেখা স্তব্ধ করে দিতে, গভীর ষড়যন্ত্রে মেতে উঠেছে। বাংলাদেশের প্রসাশনের মধ্যেও সেই ভূত লুকিয়ে আছে।
কনস্যুলেটের এমন অনুষ্ঠান দেখে একজন তার ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করে বলেন, তারই ধারাবাহিকতায় কি নিউইয়র্কে বাংলাদেশ কনস্যুলেট অফিসে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন ? রবীন্দ্র-নজরুলকে কৌশলে অবজ্ঞা করার অপকৌশল ?
তিনি আরও প্রশ্ন রেখে বলেন, তা না হলে এতদিন পর কেন নববর্ষ উদযাপন ? বৈশাখের পর জ্যৈাষ্ঠ পেরিয়ে আষাঢ় মাসে বাঙালি হওয়ার উদগ্র বাসনা জেগে উঠলো কেন ? নববর্ষ পালন করার কি সরকারী নির্দেশনা ছিল ? নাকি কনস্যুলেটের নিজেদের সিদ্ধান্তে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন ? যেনতেন ভাবে এবং বিতর্কিত অনুষ্ঠান করে দেশের অর্থ অপচয় এবং সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করার অধিকার তাদের কে দিল ?
ওখানে রাজনীতিক ছাড়া অনেক শিল্পী সাহিত্যিকে ছিলেন । কিন্ত আশ্চার্য কেউ কোন উচ্চবাচ্য করলেন না ! উপস্থিত সবাই রবীন্দ্র-নজরুলের গরীমাই ভুলে গেছে !
ওখানে কিছু নির্ধারিত ব্যক্তিই সব সময় যান। তারা সব সময় কনসুলেটের প্রসংশায় মগ্ন থাকেন । তাদের কোন বোধ-বিবেক, চেতনা-আদর্শ নাই । তাদের চোখে কোন অসঙ্গতী ও কোন ভুল ত্রুটি ধরা পড়ে না। এমন মন্তব্য করেন এক সাংবাদিক।