সনজীবন কুমার
বাংলাদেশে বন্যার্তদের পাশে দাঁড়াতে নিউইয়র্কের প্রবাসী বাংলাদেশিরা সহযোগিতায় নেমে পড়েছেন। নিউইয়র্কের বিভিন্ন আঞ্চলিক-সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, প্রতিষ্ঠান,রাজনৈতিক দল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ পাশে দাঁড়াতে অর্থ সংগ্রহ শুরু করেছে।
গত কয়েকদিন থেকে নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস,জ্যামাইকা, ব্রঙ্কস, ব্রুকলিন,ওজন পার্ক, এষ্টোরিয়ার বাংলাদেশী অধ্যুষিত এলাকায় রাস্তায় ও ফুটপাতে দাঁড়িয়ে বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ অভিযান শুরু হয়েছে।
বন্যার্তদের সহযোগিতায় মাদার সংগঠন হিসেবে পরিচিত বাংলাদেশ সোসাইটি ৩০ লক্ষ টাকা প্রদানে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। জ্যামাইকা বাংলাদেশ ফ্রেন্ডস সোসাইটি, ফেনী জেলা সমিতি, মুনা, আশা চ্যারিটি ফাউন্ডেশন, শো টাইম মিউজিক, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনও অর্থ সংগ্রহ করেছে।
এ ছাড়া আগামী কাল শনিবার প্রগ্রেসিভ ফোরাম, গাইবান্ধা সোসাইটি অব আমেরিকা ও ডায়াস্পোরা ইউএসএ জ্যাকসন হাইটসে, আগামী ১ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া ও জুড়ি উপজেলাবাসী বন্যার্তদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করবে।
গত ২৩ আগস্ট নিউইয়র্কের বিভিন্ন মসজিদে অর্থ সংগ্রহ করা হয় এবং বন্যায় যারা নিহত হয়েছে, তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করা হয়।
বিভিন্ন সামাজিক সংগঠন, বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন ব্যক্তি বন্যার্তদের সহযোগিতায় অর্থ সংগ্রহ করে তা বাংলাদেশে পাঠিয়ে দিচ্ছেন। অনেকেই নিউইয়র্ক বাংলাদেশ কনস্যুলেটের মাধ্যমে অথবা সরাসরি প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের অ্যাকাউন্টে অর্থ প্রেরণ করেছেন। আবার কেউ কেউ গো-ফান্ড ও ব্যাংকিং সফটময়্যার জেল-এর মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করছেন।
কোনো কোনো সংগঠন নিজ নিজ এলাকার সংগঠনের পক্ষ থেকে অর্থ সংগ্রহ করে তাদের এলাকায় পাঠিয়ে দিচ্ছেন।
অনেকেই ক্ষতিগ্রস্থ নিজ নিজ এলাকার দুর্গত মানুষের পাশে থাকার আহ্বান জানিয়েছেন নিউইয়র্কের বেশ কিছু সংগঠনের নেতারা।
এখ পর্যন্ত নিউইয়র্কে প্রায় দেড় লক্ষ ডলার সংগ্রহ হয়েছে বলে খবর পাওয়া গেছে।
নিউইয়র্কের শাহ্ ফাউন্ডেশন পরিবার তাদের সঞ্চিত অর্থের ২৫ ভাগ দু:সময়ে বন্যাকবলিত মানুষের জন্য দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এ ব্যাপারে ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি হোসনেয়ারা চৌধুরী বলেন, আমাদের পরিবারের জীবনের বিশেষ একটি মুহূর্ত। এটি কোনো সহায়তা নয়, এটি আমাদের ভালোবাসা!
গাইবান্ধা সোসাইটি অব আমেরিকার সাংগঠনিক সম্পাদক ফাহমিদা চৌধুরী লুনা বলেন, আমরা ত্রাণসহায়তা নয়,ভালোবাসার সহায়তা নিয়ে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। বন্যায় আক্রান্ত মানুষের মনোবল যাতে দৃঢ় থাকে, সে জন্য পাশে দাঁড়িয়েছি। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসীদের ঐক্যবদ্ধভাবেই এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য আহবান জানাচ্ছি।
নিউইয়র্কে মৌলবিবাজার প্রবাসী মতিলাল দেব রায় বলেন,স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যার কবলে নিপতিত আমরা! একই সঙ্গে এই মুহূর্তে বন্যাদুর্গতদের জন্য সহায়তা করা প্রধান কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। চলমান দুর্যোগকালে যার যা কিছু আছে, তা নিয়ে কবলিত মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। হতাহতের শিকার পরিবারগুলির প্রতি আমরা গভীর সমবেদনা জানাই।
প্রবাসীরা বলেছেন, বন্যা পরবর্তী দুর্ভোগ আরো বাড়ে। চিকিৎসা ব্যবস্থা ও পানীয় জলের চরম সংকট দেখা দেয়। তাই পুনর্বাসনের জন্য বিপুল অর্থ সাহায্য দরকার। তার জন্য প্রত্যেক প্রবাসীর সাধ্যমত সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়ার দরকার।
দেশের ১১টি জেলায় বন্যায় মৃত্যুর সংখ্যা আরও বেড়েছে। গত বুধবার বেলা একটা পর্যন্ত ৩১ জন মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়ার কথা জানিয়েছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়। বন্যায় গত মঙ্গলবার পর্যন্ত মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছিল ২৭।
গত বুধবার সচিবালয়ে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরেন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কে এম আলী রেজা। সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এখন পর্যন্ত ১১টি জেলার ৭৩টি উপজেলা বন্যায় প্লাবিত। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে প্রায় ৫৯ লক্ষ মানুষ। এখন পর্যন্ত আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে ৪ হাজার ৩টি। এগুলোতে ৫ লাখ ৪০ হাজার ৫১০ জনকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া ৩৯ হাজার ৫৩১টি গবাদিপশুকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে।