রাশিয়াকে যুদ্ধে নামানো গেছে, চীনকে যাবে কি?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম : বলা হয়, আঞ্চলিক দেশগুলোর বন্ধুত্ব আশীর্বাদস্বরূপ। এতে দেশগুলো তাদের নিকট প্রতিবেশী থেকে সহজে কাঁচামাল বা প্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী কিনে নিতে পারে। বস্তুত প্রতিবেশী ছোট কোনো দেশ তার বড় প্রতিবেশী থেকে সহজে দ্রব্যসামগ্রী আমদানি-রপ্তানি করে অল্প সময়ে প্রভূত আয় করতে পারে। অন্যদিকে দূরবর্তী দেশে রপ্তানি সময়সাপেক্ষ, দুর্ঘটনার আশঙ্কা, প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট বিপদের আশঙ্কা কাটিয়ে তারপর আয়ের মুখ দেখা সম্ভব। ইউরোপীয় দেশগুলো এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাদের সব দেশই উন্নতি করছে সমানতালে। ভিয়েতনাম-লাওস-কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ড অন্য একটি উদাহরণ।

রাশিয়া-ইউক্রেন দুটি দেশই ’৯০-পরবর্তী যুগে প্রভূত উন্নয়ন করেছে। তাদের বৈরিতা অতটা প্রকট হয়ে উঠেনি তখনও। অথচ সেই সহযোগী দেশ দুটি এখন তিন মাসের অধিক সময় যুদ্ধে লিপ্ত। কোটি কোটি ডলার সমপরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি সহ্য করে, শতশত শিশু-নারী-বৃদ্ধ, সাধারণ মানুষ ও সৈনিক আত্মদান করেও যুদ্ধের ইতি টানছে না। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ কি দরকার ছিল? রাশিয়া কি কারও পাতানো ফাঁদে পা দিয়েছে? ইউক্রেনের পূর্ব অঞ্চলের দোনাস্ক, লোহাস্ক জাতিগত রাশিয়ানদের আবাসস্থল। ইউক্রেন সেখানে কীভাবে শাসন চালিয়েছে, তা আলোচনা না করেই বলা যায়, সেখানকার জনবসতি রাশিয়ানদের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে বেশ আগ্রহী। অবস্থা বুঝে রাশিয়া তাদের স্বীকৃতি দেয় এবং তাদের স্বাধীনতা অর্জন ও সংরক্ষণে সৈন্য পাঠায়। এর আগে রাশিয়া ক্রিমিয়া দখল করে এবং একটি বড় সেতু নির্মাণ করে রাশিয়ান মূল স্থলভাগের সঙ্গে ক্রিমিয়ার যোগাযোগ সহজ ও দ্রুত করে। রাশিয়া সর্বশেষ সেভেরডনেক্স দখল করেছে গত ২৬ জুন। এখন রাশিয়ার টার্গেট লিসিসানক্স। কিয়েভসহ রাশিয়া মিসাইল হামলা চালাচ্ছে বড় বড় শহরে।

এ যুদ্ধে রাশিয়ার অর্থনীতি

আমেরিকা, কানাডা, যুক্তরাজ্য, জাপান, ইউরোপীয় ইউনিয়ন একের পর এক sanction দিয়ে রাশিয়াকে প্রায় একঘরে করে ফেলেছে। রাশিয়ান জমা অর্থ সেসব দেশে ফ্রিজ করা হয়েছে। রাশিয়ান বিলিয়নার ও ভ্লাদিমির পুতিনের সভাসদ, আত্মীয়পরিজন, শুভাকাঙ্ক্ষীদের ব্যাংক হিসাব জব্দ করা হয়েছে। রাশিয়ান কোটিপতিদের বিদেশের সম্পত্তি, প্রমোদতরি, স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হচ্ছে। এতে রাশিয়ান অর্থনীতি সাময়িক ধাক্কা খেয়েছে। তবে কিছুদিনের মধ্যে রাশিয়ান অর্থনীতি তেল-গ্যাস বিক্রি করে তার নিজস্ব মুদ্রা রুবেলের অবস্থান সুদৃঢ় করে ফেলেছে। রাশিয়ার তেল-গ্যাস বিক্রি যুদ্ধের ১০০ দিনে প্রায় ১০০ বিলিয়ন ডলার।

আমেরিকার আসল উদ্দেশ্যটা কী?

আমেরিকা চীনকে স্বীকৃতি দেয় একটি বৈধ সরকার হিসাবে, যার মধ্যে তাইওয়ানও অন্তর্ভুক্ত। এটি এক চীন নীতি হিসাবে বিশ্বে পরিচিত। আমেরিকা পরবর্তী সময়ে তাইওয়ান থেকে তার সব সামরিক সরঞ্জাম ও সৈন্য প্রত্যাহার করে। বাইডেন প্রশাসন চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখলেও তাইওয়ান আক্রমণ করলে চীনের সঙ্গে যুদ্ধের ইঙ্গিত দিয়েছে। এটি বাইডেন প্রশাসনের Rock-solid commitment to Taiwan. জন বল্টন অবশ্য একধাপ এগিয়ে বাইডেন প্রশাসনকে তাইওয়ানকে স্বীকৃতি দিতে ও পূর্ণ কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে দাবি জানিয়েছেন। চীন তার অর্থনীতি আমেরিকায়ও বিস্তৃত করেছে। আমেরিকা নিজ অবস্থান অটুট রাখতে তাইওয়ানকে যুদ্ধে ঠেলে দিতে চাইছে বলে অনেকে অনুমান করেন। ট্রাম্প প্রশাসন চীনের সঙ্গে ব্যবসায়িক দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েছিল। চীনও তার প্রত্যুত্তর দিয়েছে সমানতালে। সুতরাং চীন ভয়ে কাতর হয়ে পড়া দেশ এখন নয়।

চীনের অর্থনীতির অবস্থা ও বিদেশে বিনিয়োগের পরিমাণ

ইদানীংকালের চীনের Going Out এবং Belt & Road Initiative বৈদেশিক বাজারে ব্যাপক বিনিয়োগ শুরু করেছে। চীনের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশে ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। শুধু ২০১৯-২০০০ সালের মধ্যে পৃথিবীর স্বল্প ও মধ্যম আয়ের দেশগুলোয় প্রায় ৮১৫.৩ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত চীনের ভৌত অবকাঠামো বিনিয়োগ সম্প্রসারিত হয়েছে। এর মধ্যে উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপে চীনের বিনিয়োগ ৬২৪.৪ বিলিয়ন ডলার। এ সময়ে চীনের বিনিয়োগ যুক্তরাজ্যে ৮৩, সুইজারল্যান্ডে ৬১.৬, কানাডায় ৫৬.৯ এবং জার্মানিতে ৪৭ বিলিয়ন ডলার। এছাড়া চীন ৯৮.৯ বিলিয়ন ডলার অস্ট্রেলিয়ায় এবং সিঙ্গাপুরে ৩৬.২, ইন্দোনেশিয়ায় ২৪.১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে।

চীনের বেল্ট অ্যান্ড রোড ইনিসিয়েটিভ-এর বিপরীতে আমেরিকার জোট

চীনের এ উদ্যোগ শুরু হয়েছে পাকিস্তানের ওয়াদ্দার পোর্টে বিনিয়োগ দিয়ে। এ ওয়াদ্দার পোর্ট হয়ে গ্যাস, তেল, পাইপলাইন, রোড কানেকশন চীনের মূল ভূখণ্ডে মিলেছে। চীনের পুরোনো সিল্ক রোড পুনরুদ্ধার শুরু হয়েছে বিভিন্ন দেশে ব্যাপক বিনিয়োগের মাধ্যমে। আমেরিকা এটি ভালো চোখে দেখছে না। চীনের বিশ্বের এক নম্বর রপ্তানিকারক দেশ হয়ে যাওয়া ও এক নম্বর সম্পদশালী দেশ হয়ে যাওয়ার অল্প দূরে থাকা আমেরিকার জন্য এটি প্রচণ্ড মাথাব্যথা। চীনের বৈরী বা শত্রু ভারত-জাপান-অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া নিয়ে আমেরিকা নতুন জোট সৃষ্টি করতে চাইছে। আমেরিকা ন্যাটো সম্প্রসারণ নীতি কার্যকর করতে উদ্যোগী হয়েছে। গত ২৬ জুন আমেরিকা, কানাডা, জার্মানিসহ জি-৭ দেশগুলো চীনের Belt & Road Initiative অনুরূপ সারা পৃথিবীতে অবকাঠামো বিনির্মাণের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এতে পরবর্তী ৫ বছরে উন্নয়নশীল দেশে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের অবকাঠামো উন্নয়নের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এটি ভালো সংবাদ উন্নয়নশীল দেশের জন্য, তবে দেখতে হবে এটি চীনের BRI প্রজেক্টের সমকক্ষ হতে পারে কি না?

পেট্রো-ডলার যুগের শেষ হবে নাকি সংকুচিত হবে?

আমেরিকা-সৌদি আরব সন্ধি হয় আমেরিকান ডলারে; সৌদি আরব, যা বিশ্বের বৃহত্তম তেল উৎপাদনকারী দেশ, সে তার তেলের দাম নির্ধারণ ও পরিশোধ করবে। আবার সৌদি আরব Organization of Petrolium Exporting Countries-এর মুরুব্বি। সুতরাং ডলার হয়ে উঠে আন্তর্জাতিক ব্যবসা ও বিনিময়ের মাধ্যম বা কারেন্সি। আমাদেরসহ সারা পৃথিবীর মুদ্রামান ডলারের বিপরীতে অনেক নেমে গেছে; যেমন ১৯৭২ সালে ২১ টাকা, ১৯৯৩ সালে ৪০ টাকা আর ২০২২-এ ডলারের মূল্য প্রতিটি প্রায় ১০০ টাকা। অথচ সৌদি আরবের রিয়ালের দাম প্রতি ডলারে গত কয়েক দশক ধরে ৩.৭৫-এর আশপাশেই ঘুরছে। এতে আমেরিকা সৌদি আরব একে অন্যের অর্থনৈতিক পার্টনার। এ ব্যবস্থার বাদ সেধেছিল ইরাক আর লিবিয়া। তারা সোনা বিনিময় হার ধরে তেলের ব্যবসা চালাতে গিয়েছিল। এতে দুই দেশের শাসকই সিংহাসনচ্যুত হলেন, বেঘোরে মৃত্যুবরণ করলেন।

রাশিয়া-চীন গত ১৯৯৫ থেকে ২০২০ পর্যন্ত নিজস্ব অর্থনীতিকে ঢেলে সাজাতে সক্ষম হয়েছে। নির্বাচন, মানবাধিকার চুলায় নিক্ষেপ করে তারা আমেরিকার অর্থনীতিকে চোখ রাঙাতে শুরু করে। স্থির হয়, রাশিয়া নিজস্ব মুদ্রায় তেল-গ্যাস বিক্রি করবে। রাশিয়া ইউরোপীয় দেশগুলোর প্রধান তেল ও গ্যাস সরবরাহকারী। ইউরোপীয় দেশগুলো প্রথমে এটা-ওটা বললেও, স্থির হয় রুবলই হবে বিনিময় মাধ্যম। রাশিয়া বিগত ১০০ দিনে ১০০ বিলিয়ন ডলার সমপরিমাণ রুবল আয় করেছে তার তেল-গ্যাস বিক্রি থেকে। চীন এ পর্যন্ত ছিল সৌদি আরব থেকে প্রধান তেল আমদানিকারক দেশ। সুযোগ বুঝে চীন ৩০ শতাংশ কম দামে রাশিয়া থেকে তেল কিনছে। চীন-রাশিয়া একে অপরকে নিজস্ব মুদ্রায় তা পরিশোধের কারণে ডলার মার খাচ্ছে। আর ডলারের জন্য এ দুটি দেশ হা করে তাকিয়ে নেই। তুরস্কও প্রস্তাব দিয়েছে রাশিয়া-ইরান-চীন ইত্যাদি দেশের সঙ্গে তারা স্বর্ণ অথবা নিজস্ব মুদ্রার মানে ব্যবসা পরিচালনা করবে। এতে আমেরিকা ভয়ানক খ্যাপে গেছে। তুরস্কের অর্থনীতি ডলারের আঘাতে এখন পর্যুদস্ত।

ইউক্রেন আমেরিকার পরামর্শ অথবা পূর্ণ সমর্থনে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধে জড়িয়ে যায়। এতে প্রাথমিক কিছু সাফল্য এলেও এখন ইউক্রেনের অবস্থা ভালো নয়। তাদের উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী রপ্তানি করা সম্ভব হচ্ছে না। তাদের প্রায় ১২ মিলিয়ন মানুষ ইউরোপে চলে গেছেন। দেশে যুদ্ধরত সৈনিকরা প্রাণ দিচ্ছেন প্রতিনিয়ত। সঙ্গে নিরস্ত্র বেসামরিক লোকের প্রাণহানি ও সম্পদহানি বিশাল; যা শত বিলিয়ন ডলার পার হয়ে যাবে বলে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্টের দাবি। রাশিয়াকে পর্যুদস্ত করতে ইউক্রেনে ভাড়াটিয়া যোদ্ধা, যুদ্ধসামগ্রী পাঠাচ্ছে আমেরিকা ও ইউরোপীয় দেশগুলো এবং গোপনে ইসরাইল। আমেরিকা স্টিংগার মিসাইল, ড্রোন, এফ-৭৭৭, ১৫৫ মি.মি. কামান পাঠিয়েছে ইউক্রেনে। বেলজিয়াম পাঠিয়েছে স্বয়ংক্রিয় রাইফেল। জার্মানি পাঠাচ্ছে ট্যাংক, সৈনিক সুরক্ষা সরঞ্জাম ও গোলাবারুদ। শুধু আমেরিকাই ১ লাখ ৪৪ হাজার রাউন্ড কামানের গোলা পাঠিয়েছে ইউক্রেনে।

যুদ্ধের তিন মাস পর এসব সরবরাহ ক্রমেই কমে আসছে। রাশিয়া এখন ইউক্রেনের সামরিক ও অর্থনৈতিক টার্গেটে আঘাত হানছে। এ আঘাত ইউক্রেন কতক্ষণ সহ্য করবে, তা দেখার বিষয়। অনেকে বলেন, চীন যদি তাইওয়ান দখল করে নেয়, তাহলে জাপান ও আমেরিকা চীনের বিরুদ্ধে সরাসরি যুদ্ধে জড়িয়ে যাবে। এমনিতেই ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের প্রভাব বেড়েই চলেছে। ১৯৪৯ সালে চীনের মূল ভূখণ্ড থেকে তাইওয়ান আলাদা হয় একটি Civil War-এর মধ্য দিয়ে। চীনের প্রেসিডেন্ট শি চীনের বর্তমান উন্নয়ন ধারা চাঙা করতে পুনরায় তাদের ছুটে যাওয়া অঞ্চল পুনরেকত্রীকরণের উদ্যোগ নিতে পারে। চীনের যুদ্ধজাহাজ বৃদ্ধি ও তা চীন সাগরে ব্যাপক বিস্তারে এ বিষয়টি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হচ্ছে। চীন চীন সাগরেন বিভিন্ন দ্বীপগুলোয় সামরিক স্থাপনা সৃষ্টি করছে। এমনকি ছোট দ্বীপে বালি ফেলে সমুদ্রপৃষ্ঠে সৃষ্টি করেছে বিমান অবতরণ রানওয়ে। এতে উদ্বিগ্ন ফিলিপিনস, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই। আর আমেরিকা এসব দেশের হয়ে চীনের আধিপত্যে হস্তক্ষেপ শুরু করেছে চীন সাগরে মার্কিন নৌবহর টহল বাড়িয়ে দিয়ে। এতে চীন তাইওয়ান প্রশ্নে ছাড় দেবে-এমনটি ভাবার সময় আসেনি।

চীনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বাড়ছে বিশ্বে তার উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রীর ব্যাপক চাহিদার ফলে। আমেরিকা, ইউরোপ, এশিয়া, আফ্রিকায় চীনা দ্রব্যসামগ্রীর ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। চীনের প্রতিযোগিতামূলক দ্রব্যমূল্যের কারণে সারা বিশ্বে বিভিন্ন দেশের ইচ্ছা বা অনিচ্ছায় চীনা উৎপাদিত দ্রব্য বিক্রি হচ্ছে। দ্বিতীয়ত, চীন অন্য দেশে সচরাচর হস্তক্ষেপ করে না। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধের পর বিভিন্ন দেশে সংঘর্ষ চলাকালীন চীন প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে হস্তক্ষেপ করেনি। ভিয়েতনাম-কম্বোডিয়া যুদ্ধের পর চীন প্রায় পুরো শক্তি ব্যয় করছে তার অর্থনৈতিক উন্নতিতে। চীনের অবকাঠামো এখন চোখ ধাঁধানো। দ্রুত উন্নতি ঘটেছে চীনের সর্বক্ষেত্রে। চীনের দেশীয় Consumption দ্রুত বাড়ছে, যা উন্নত দেশের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

চীন তার প্রভাববলয় তৈরিতে তার বিশাল রিজার্ভ অর্থব্যয় করছে। চীন লাভজনক প্রজেক্টে সারা বিশ্বে বিনিয়োগ করছে। এসব বিনিয়োগ প্রায় বিশ্বব্যাপী; বিশেষত, যে দেশগুলো অর্থের অভাবে উন্নয়ন ঘটাতে পারছে না। চীনের পৃথিবীব্যাপী বিনিয়োগ আমেরিকাকে হতাশায় ফেলেছে। পেন্টাগন খুঁজছে খোঁড়া যুক্তি-যেভাবেই হোক, চীনকে যদি যুদ্ধে নামানো যায়! এটি এখন প্রমাণিত-যেসব দেশ পারমাণবিক অস্ত্রের অধিকারী, তাদের কনভেনশনাল যুদ্ধের মাধ্যমে পরাজিত করা দুঃসাধ্য। কেননা, তাদের পিঠ দেওয়ালে ঠেকলে তারা পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করবেই। এতে সভ্যতা হুমকির মুখে পড়বে। কে চায় সুন্দর এ পৃথিবী ধ্বংস হোক, মানুষ বিকলাঙ্গ হোক। তবু প্রশ্ন থাকে, চীনকে যুদ্ধে ঠেলে দিলে, তার বিপুল বৈদেশিক বিনিয়োগ জব্দ করার প্রচেষ্টা করলে কার লাভ হবে? আমেরিকা কি পুনরায় পৃথিবীর একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করতে পারবে? ডলার কি বিশ্বব্যাপী বাণিজ্যের একমাত্র বিনিময় মুদ্রা হিসাবে অনন্তকাল চলতে থাকবে? সামনেই দেখা যাবে পরিবর্তনের আভাস। প্রশ্ন হলো, সে পরিবর্তনের অভিঘাত বাংলাদেশ কি সামাল দিতে পারবে, নাকি পিষ্ট হবে?

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম : তুরস্কে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক সামরিক অ্যাটাশে

Exit mobile version