শেষ ধাপেও সহিংসতা

ইউপি নির্বাচন শান্তিপূর্ণ না হওয়ার মূল দায় ইসির

ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংস ঘটনা বৃদ্ধির বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। সপ্তম বা শেষ ধাপের ইউপি নির্বাচনেও সহিংস ঘটনায় প্রাণ গেছে দুজনের। চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সোমবার দিনভর ব্যাপক সংঘর্ষ ও গোলাগুলির মধ্য দিয়ে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নলুয়া ইউনিয়নে প্রতিপক্ষের ছুরিকাঘাতে এক স্কুলছাত্র এবং বাজালিয়া ইউনিয়নে এক ব্যক্তি গুলিতে নিহত হয়েছেন। এ উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে ভোটকেন্দ্র দখলকে কেন্দ্র করে ধাওয়া-পালটা ধাওয়া, মুহুর্মুহু গুলিবর্ষণ ও অস্ত্রের ঝনঝনানির খবর পাওয়া গেছে।

এতে অর্ধশতাধিক মানুষ গুলিবিদ্ধসহ আহত হয়েছে। সাতকানিয়ার একটি ইউনিয়নে এক যুবকের প্রকাশ্যে গুলিবর্ষণের দৃশ্য বিশেষ আলোচনার বিষয়ে পরিণত হয়েছে। এ ধাপের ইউপি নির্বাচনে দেশের অন্যান্য স্থানেও বিক্ষিপ্ত সহিংসতার খবর পাওয়া গেছে। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদে এটিই শেষ নির্বাচন। তাই জনগণ আশা করেছিল, এবারের ইউপি নির্বাচনে এই নির্বাচন কমিশন জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করতে সক্ষম হবে।

কিন্তু নির্বাচন কমিশন তা পারেনি। এবার প্রতিটি ধাপের ইউপি নির্বাচনেই বিভিন্ন এলাকায় ভোটারদের ভয়ভীতি দেখানোসহ সহিংস ঘটনা ঘটেছে। ইসির হিসাবেই এবার সাত ধাপের ইউপি নির্বাচনে ১০০ জনের প্রাণহানি ঘটেছে। তবে বেসরকারি হিসাবে প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি।

স্থানীয় সরকার নির্বাচনে কিছুটা উত্তেজনা বরাবরই থাকে। তবে এবারের নির্বাচনে সহিংসতার মাত্রা ছিল অনেক বেশি। নির্বাচনি সহিংসতা বৃদ্ধির কারণ হিসাবে বিশেষজ্ঞরা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিষ্ক্রিয়তাকেই প্রথমত দায়ী করেছেন। দ্বিতীয়ত, নির্বাচনি মাঠে দলীয়ভাবে বিএনপি না থাকায় অধিকাংশ স্থানেই ছিলেন ক্ষমতাসীন দলের বিদ্রোহী প্রার্থী। তারা নিজেরাই জড়িয়ে পড়েছেন সংঘাতে। এক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দল অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ধরে রাখতে পারেনি বলে মনে করেন কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ।

ইউপি নির্বাচনে সহিংসতা বৃদ্ধির নেপথ্যের কারণগুলো খুঁজে বের করে এর সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এমনিতেই সমাজে মূল্যবোধের অবক্ষয়ের যে ধারা চলমান, তা নিয়ে সমাজবিজ্ঞানীসহ সংশ্লিষ্ট সবাই চিন্তিত। সমাজে সার্বিকভাবে উচ্চ নৈতিকতা ও উন্নত মূল্যবোধের চর্চার পরিবেশ সৃষ্টি না হলে কোনো নির্বাচন শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হবে কিনা, এ বিষয়ে সন্দেহ থেকেই যায়।

মনে রাখতে হবে, নির্বাচন কমিশনের একার পক্ষে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা সম্ভব নয়। সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের লক্ষ্যে সব অংশীজনকেই উন্নত রাজনৈতিক সংস্কৃতি ও গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের পরিচয় দিতে হবে।

Exit mobile version