হায়রে রাজনীতির চাল,নিউইয়র্কে বিএনপি চাটে ৭১ টেলিভিশন‘র গাল

এস. কে সরকার
গানটি অনেকের জানা আছে ‘কাল হয়েছে অকাল ছাগলে চাটে বাঘের গাল’। এর মানে বেকায়দায় পড়লে ছাগলও ভয়ংকর বাঘের গাল চাটে। সময় ও সুযোগের পরিবতর্নে এমনি হয়, “৭১ টেলিভিশন” এখন বিএনপির গাল চাটছে।
ঠিক এমনই এক ঘটনা ঘটেছে নিউইয়র্কে বিএনপি নেতাদের বেলায়। গত ২১ জুন জ্যাকসন হাইটসে বিএনপির কয়েকজন শীর্ষ স্থানীয় নেতা “৭১ টেলিভিশন”-এর প্রতিষ্ঠা বাষির্কী পালন করে। যে টিভি এক সময় ছিল বিএনপির ‘মিডিয়া সতীন’। যে টিভির নাম শুনলে বিএনপি নেতাদের গায়ে আগুন জ্বলতো, সেই টিভির ১৩ তম প্রতিষ্ঠা বাষির্কী ঘটা করে উপযাপন করলো বিএনপির নেতা জাকির এইচ চৌধুরী। তার সাথে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্র বিএপির মাসুদুল হক চৌধুরী, মিজানুর রহমান মিজানসহ বেশ কয়েকজন বিএনপির নেতা।

২০২৩ সালে এই ৭১ টেলিভিশন বর্জন করার সিদ্ধান্ত নেয় বিএনপি। দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানির এক আহ্ববানে বলা হয়, “৭১ টেলিভিশন”-এর টকশো বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপির সিনিয়র নেতারা। দলটির যেসব নেতারা টকশোতে আমন্ত্রিত হয়ে যান, তাদের সঙ্গে বসে আলোচনা সাপেক্ষে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এ ছাড়াও বিএনপি যখন ক্ষমতায় আসার পর ৭১ টেলিভিশন বন্ধ করার ঘোষনা দেয়া হয়।
বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে দেশের উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বিক্ষুব্ধ জনতা ৭১ টিভিসহ বেশ কয়েকটি টিভির কার্যালয়ে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। এতে আট টেলিভিশন চ্যানেল বন্ধ হয়। শোনা যায়, এই হামলায় বিএনপির নেতা-কর্মীরাও অংশ নিয়েছিল।
যে টিভি বিএনপির চির শত্রæ হিসেবে বিবেচিত হয়ে আসছে, যে টিভিকে বিএনপির নেতারা ভারতের ও আওয়ামী লীগের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করেছিল,সেই টিভি কি ভাবে বিএনপির বন্ধু হয় ? কি স্বার্থ ? কার স্বার্থ ? বিএনপি নেতা জাকির এইচ চৌধুরীগংদের না ৭১ টেলিভিশনের ? এক সময় যখন কেউ কারো নাম শুনতে পেত না, কেউ কারো মুখ দেখতো না তাদের মধ্যে গলায় গলায় এত পিরিতি জন্ম নিল কেন ? এ ব্যাপারে অনেকেই বলছে,লাভে লোহা টানে। আবার কেউ কেউ বলছে, রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই, রাজনীতির দাবা খেলায় কে কখন কোন ঘুটি দিয়ে মাত হবে তা বলে শেষ করা যাবে না। আর আমাদের দেশের কর্পোরেট প্রতিষ্ঠানগুলোও ঝোপ বুঝে কোপ মারে। বৃষ্টি যে দিকে সেই দিকে ছাতা ধরে। তারা জানে কখন কার ঘাড়ে উঠতে হবে। সেই জন্যই হয়ত একাত্তুর টিভি নিউইয়র্কের বিএনপির উপর সওয়ার হয়েছে, নতুন কোন সুবিধা পেতে!
ব্যক্তি স্বার্থ যখন বড় হয়েওঠে, তখন হামার অনেক সময় ‘হালাল’ হয়ে যায়। এটাই আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি।
রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের বাঁকবদলের সাথে সাথে প্রতিষ্ঠান, দল ও দলের নেতা-কর্মীদের চরিত্রও আমুল বদলে যায়। কে কখন কার হবে তা মালুম করা সাধারণ মানুষের ধারণার বাইরে থেকে যায়।
রাজা যায় রাজা আসে, কিন্ত সাধারণ মানুষের ভাগ্যের লিখন যা আছে তাই থেকে যায়। পুরোনো মদ নতুন মদের বোতলে প্রবেশ করে শুধু মাত্র রং বদলায়। কিন্ত শোষিত মানুষের নিয়তির কোন পরিবর্তন হয় না।
রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা উপরের তলার লোকেরা হালুয়া-রুটি,ঘি-মাখনের ভাগ ঠিক ঠিক পেয়ে যায়। কিন্ত দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পাতে উচ্ছিষ্ঠও পরে না। এই হলো আমার দেশ ও সেই দেশের নেতাদের চরিত্র।
রাজনৈতিক নেতারা তাঁদের নিজেদের স্বার্থেই একটি কায়েমী রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান তৈরি করেন, যাতে করে তাঁরা একচ্ছত্র ক্ষমতার অধিকারী হতে পারেন। তাঁরা রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করার মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিন ক্ষমতায় টিকে থাকার বন্দোবস্ত করেন। এ ক্ষেত্রে অল্পসংখ্যক টিভি চ্যানেল, রাজনৈতিক এলিট, আমলা এবং উচ্চবিত্তের একটা অংশ সেই বন্দোবস্তের সহয়োগি হিসেবে কাজ করে। হয়ত সেই পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই নিউইয়র্কে বিএনপির নেতারা “৭১ টেলিভিশন”-এর প্রতিষ্ঠা বাষির্কী পালন করে ।

Exit mobile version