অ্যাফোর্ডেবল অ্যাপার্টমেন্ট পেতে যত সমস্যা

পঞ্চাশ বছর আগে নিউইয়র্কের সিটি প্ল্যানাররা সতর্ক করেছিলেন যে নিউইয়র্ক সিটি ৫৫ মিলিয়ন (সাড়ে পাঁচ কোটি) জনসংখ্যা অধ্যুষিত এক দানবীয় নগরীতে পরিণত হবে। এই দুর্ভাগ্য থেকে সিটিকে রক্ষা করার জন্য ১৯৬১ সালে সিটির জোনিং ও ভূমি ব্যবহার আইনের ব্যাপক সংস্কার সাধন করে ভবনের আকার ও সেগুলোতে কত সংখ্যক মানুষ বসবাস করতে পারবে তা নির্ধারণ করে দেয়।

নিউইয়র্কে জনসংখ্যা বৃদ্ধি নগরবিদদের ভবিষ্যদ্বাণী অনুসারে দানবীয় না হলেও, যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে তাদের আবাসন ব্যবস্থা করতে সিটি কর্তৃপক্ষকে সবসময় হিসশিম খেতে হয়েছে এবং এখনও তারা আবাসন নিয়ে ব্যতিব্যস্ত থাকেন। সিটিতে আবাসন সংকট লেগেই আছে এবং সীমিত আয়ের মানুষের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে বাড়ি ভাড়া এবং বাড়ির দাম এত বৃদ্ধি পেয়েছে যে তাদের পক্ষে বাড়ি কেন্ দু:সাধ্য হয়ে পড়েছে।

রিয়েল এস্টেট প্রতিষ্ঠান ডগলাস এলিম্যান এর রিপোর্টে দেখা যায় যে ২০১৯ সালে ম্যানহাটানের আবাসিক এলাকাগুলোতে যে বাড়ির ভাড়া ছিল ১,৫০০ ডলার, গত জুন মাসে সেটির ভাড়া ৪,০০০ ডলারে পৌছেছে। নিউইয়র্ক মেট্টোপলিটান এলাকায় ২০১৯ সালে অতিরিক্ত ৩৪০,০০০ এর বেশি অ্যাপার্টমেন্টের প্রয়োজন ছিল, কিন্তু গত সাড়ে তিন বছরে এত সংখ্যক অ্যাপার্টমেন্ট সিটিতে নির্মিত হয়নি। ওয়াশিংটন ডিসি’র ্পলিসি এন্ড রিসার্চ গ্রুপ ‘আপ ফর গ্রোথ’ এর গত মে মাসের সমীক্ষা অনুযায়ী যুক্তরাষ্ট্রের অন্যান্য বড় সিটি বোস্টন, অস্টিন ও স্যান ফ্রান্সিকোতে গত এক দশকে যে হারে বাড়ি ও অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে, নিউইয়র্ক সিটিতে তার চেয়ে অনেক কম অ্যাপার্টমেন্ট নির্মিত হয়েছে। কর্মসংস্থান বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে বাড়ি বা অ্যাপার্টমেন্ট সংখ্যা বৃদ্ধি না পাওয়ায় সিটিতে এক জটিল সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে।

নিউইয়র্ক টাইমসের এক রিপোর্ট অনুযায়ী আবাসনের চাহিদা ও সরবরাহের মধ্যে বহু ধরনের প্রতিবন্ধকতা রয়েছে এবং সেগুলোর অন্যতম হচ্ছে বর্তমান জোনিং ও ভূমি ব্যবহার আইনে ভবনের আকার ও উচ্চতা সীমা নির্ধারিত থাকায় অনেক এলাকায় নতুন আবাসন পরিকল্পনা গ্রহণ করতে না পারা; নির্মাণ ব্যয় অত্যধিক বৃদ্ধি পাওয়ায় অ্যাফোর্ডেবল হাউজিং পরিকল্পনা অনুযায়ী বাস্তবায়নে বাধার সৃষ্টি হয়েছে এবং তহবিল সংস্থানের ব্যাপারে স্টেট ও সিটি সরকারের মধ্যে মতৈক্য প্রতিষ্ঠিত না হওয়ায় নতুন অ্যাফোর্ডেভল প্রকল্প হাতে নিতে সাহসী হচ্ছে না সিটি কর্তৃপক্ষ। যদিও সকল স্তরের প্রতিনিধিরা মনে করেন যে করোনা মহামারীর প্রভাব থেকে উদ্ধার লাভের জন্য, হোমলেস বেড়ে চলার সমস্যা সমাধান করার জন্য এবং দরিদ্র সিটিবাসীকে যাতে উচ্ছেদের কবলে পড়তে না হয়, সেজন্য জরুরী উদ্যোগ গ্রহণ প্রয়োজন। কিন্তু অর্থ বরাদ্দের প্রশ্ন এলেই অধিকাংশ প্রতিনিধি দায়িত্ব এড়াতে চেষ্টা করেন, যা সিটির আবাসিক সংস্থানের প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সাবেক মেয়র বিল ডি ব্লাজিও’র প্রশাসনে হাউজিং এন্ড ইকনমিক ডেভেলপমেন্ট বিষয়ক ডেপুটি মেয়র ভিতি এল বীন বলেছেন, আমি সবসময় একজন আশাবাদী মানুষ, কিন্তু বিদ্যমান আবাসন পরিকল্পনাগুলো সম্পর্কে আমি অত্যন্ত উদ্বিগ্ন বোধ করছি।” বাড়ি ভাড়া বৃদ্ধির চাপ ও জীবনযাত্রার ব্যয় ক্রমবর্ধমান হারে বেড়ে চলায় ছেষট্টি বছর বয়সী সিনথিয়া রীল গত মার্চ মাসে আপার ইস্ট সাইড থেকে বাড়ি পরিবর্তন করে জর্জ ওয়াশিংটন ব্রিজ থেকে কয়েক ব্লক উত্তর দিকে কম ভাড়ার একটি অ্যাপার্টমেন্টে যান, যেটির মাসিক ভাড়া ২,০০০ ডলার। কিন্তু এ ভাড়াও তার আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয় বলে তিনি তার ্আগামী বছর নিউ জার্সিতে চলে যাওয়ার কথা ভাবছেন।

আবাসন সংকটের জন্য জোনিং ব্যবস্থাকেই বিশেষভাবে দায়ী করা হচ্ছে। বর্তমান জোনিং ব্যবস্থায় সিটির উপকণ্ঠে এক বা দুই ফ্যামিলি বিশিষ্ট বাড়ি ছাড়া বড় অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিং নির্মাণের অনুমতি নেই, যার ফলে সিটিতে আবাসন সমস্যা বেড়ে চলেছে। জোনিং আইন সংশোধন না করা হলে এ সমস্যার আশু সমাধানের কোনো সম্ভাবনা নেই, বরং দিনদিন এ সমস্যা আরও বৃদ্ধি পেতে থাকবে বলে আশংকা ব্যক্ত করা হচ্ছে।

Exit mobile version