সন্ধান২৪.কম: প্রথমত আমি ঈশ্বর বা ভগবানে বিশ্বাস করিনা। স্বাভাবিক ভাবে ধর্মেও বিশ্বাস করি না। এটা আমার নীতিগত অবস্থান। দ্বিতীয়ত, আমি সাম্যবাদে বিশ্বাস করি। এটা আমার জীবন দর্শন। স্বাভাবিকভাবে আমি একজন অসাম্প্রদায়িক ব্যক্তি। আমি সাম্প্রদায়িকতা, ধর্ম, ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার চরম ভাবে ঘৃণা করি। কারণ ধর্ম, ধর্মান্ধতা ও ধর্মীয় কুসংস্কার সভ্য সমাজের জন্য প্রধান বাধা। সুতরাং এর বিরুদ্ধে আমার কঠোর অবস্থান। এক্ষেত্রে আপোস সমঝোতার কোনও অবকাশ নেই।
আমি মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করি এবং লালন করি। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তি এবং সকল প্রকার ধর্মীয় মৌলবাদের (সে যে ধর্মাবলম্বীই হউক) চরম বিরোধী। আমার আজীবন লড়াই তাদের বিরুদ্ধে। এই নীতিগুলো আমি যথাসম্ভব মেনে চলার চেষ্টা করি।
উপরের ভূমিকাটি এজন্য যে বিষয়গুলোর প্রতি একনিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বে নিউইয়র্কে মেনে চলা বড়ই কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। এক ধরনের পরিচয় সংকটে ভোগাদের নানা অনুষ্ঠানে আদর্শ ও নীতি মেনে চলা একটি বড় সমস্যা। দ্বিতীয়ত, যারা একসময় নীতি-আদর্শ মেনে চলতেন কিংবা অনুসারী ছিলেন তাদের অবস্থান এখন ভীষণ ভাবে দোদুল্যমান। অনেকে নীতি-আদর্শ ভ্রষ্ট। এদের অনেকের অবস্থান ইতিমধ্যে বিভিন্ন ভাবে পরিস্কার হয়ে গেছে। কোন কোন অনুষ্ঠানে একেবারে না যাওয়ার মতো না হলেও উপস্থিত হয়ে নানা বিচিত্ররূপীদের অংশগ্রহনে বেকায়দায় পড়তে হয়।
এমনই একটি অনুষ্ঠানে আমি নিজেই পড়ে গিয়েছিলাম। গতকাল ২২শে জুন নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস-এ দু’টি অনুষ্ঠান ছিল। একটি আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, অন্যটি জাসদের একাংশের উদ্যোগে সিরাজুল আলম খানের মৃত্যুবার্ষিকা পালন। বাসদ নেতা শাহাবউদ্দিন আমি দু’জনই একে অন্যের প্রতিবেশী বলা চলে। শাহাবুদ্দিন বাসদ করলেও আমার একান্ত প্রিয়। দীর্ঘদিনের পরিচিত। শাহাব উদ্দিন একসময়ের মাঠ কাঁপানো তুখোড় ছাত্রনেতা। শাহাবুদ্দিন আমাকে ভীষণ শ্রদ্ধা করেন। জাসদ ও বাসদের আদর্শের দৃষ্টিতে শাহাবুদ্দিন একজন সাম্যবাদের অনুসারী। সে অনুসারে বহুলাংশে কাছের মানুষ। কিন্তু তাদের বিভিন্ন অনুষ্ঠান ও দলের বিভিন্নজনের সম্পর্কে আমার এলার্জি আছে। শাহাব উদ্দিন সম্প্রতি একটি মসজিদের সভাপতি হওয়া নিয়ে আমি খুশি হতে পারিনি। তাতে সম্পর্কের তেমন কোন অবনতি হয়নি। কিন্তু তার ও তাদের দলীয় কর্মসূচীতে অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে বহুলাংশে সীমাবদ্ধতা ও আপত্তির জায়গা রয়েছে।
নিউইয়র্ক আওয়ামী লীগ নেতৃত্বের কোন্দলে বহুধা বিভক্ত। দলের ও দেশের এই দুর্যোগের সময়েও তারা তাদের নেতৃত্বের কোন্দলের অভ্যাস পরিবর্তন করতে পারেননি। তাই কোন গ্রুপের এবং সমাবেশের উপস্থিতি দেখতে কৌতুলী মন নিয়ে ডাইভাার্সিটি প্লাজায় প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী দেখতে গিয়েছিলাম। সমাবেশ দেখে রীতিমতো হতাশ হয়ে চিন্তা করলাম বাসায় যাওয়ার পথে শাহাব উদ্দিনের গাড়ীতে করে চলে যাবো। তার অনুষ্ঠানের অবস্থা জানতে ফোন করলাম শাহাব উদ্দিনকে। বললেন, অনুষ্ঠান এখনও শুরু হয়নি, লোকজন আসছেন। আপনি চলে আসেন। চলে গেলাম শাহাব উদ্দিনের অনুষ্ঠানে। গিয়ে আগেই বলে রাখি আমাকে যেন বলার জন্য ডাকা না হয়।
উপস্থিতদের মধ্যে সবাই পরিচিত এবং বিভিন্ন গ্রুপ ও মতের। আমার না বলা সত্ত্বে একেবারে শেষে শাহাব উদ্দিন কিছু বলার জন্য আমাকে ডাকেন। সিরাজুল আলম খানের স্মরণ সভায় হয়তো বলতে তেমন আপত্তি থাকতো না, কিন্তু পাঁচ মিশেলী অংশগ্রহনকারীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন আমার ব্যক্তিগত দৃষ্টিতে যাওয়া কিংবা বলা সমীচীন নয়। আমি আপত্তি জানাই, কিন্তু উপস্থিত সবার অনুরোধ বেশিক্ষণ আপত্তি করা আমার পক্ষে দৃষ্টিকটু ঠেকেছে। বাধ্য হয়ে কিছু বলতে হয়েছে। এজন্য আমি নিজেই নিজের কাছে অনুতপ্ত। ইতিমধ্যে আমার অংশগ্রহণ নিয়ে পরিচিত কেউ কেউ প্রশ্ন তুলে আপত্তি জানিয়েছেন। তাদের আপত্তিকে আমি যথাযত সম্মান জানিয়ে বলতে চাই, আমাকে ভীষণ বেকায়দায় পড়ে কাজটি করতে হয়েছে। এজন্য সুহৃদ বন্ধুদের প্রতি আন্তরিকভাবে অনুতপ্ত ও দুঃখিত।