এস.কে. সরকার ঃ প্রবাস জীবনে রাজনীতি চর্চায় যুক্তরাষ্ট্রের বাংলাদেশিরা অন্য যে কোনো অভিবাসী জনগোষ্ঠীর চেয়ে অনেক বেশি সক্রিয়।
কিন্তু নিউইয়র্কের সেই রাজনীতি ক্রমেই দেউলিয়া হয়ে উঠছে। কান্ড-জ্ঞান,স্থান বা কাল মানছে না, তার প্রমাণ বার বার দিচ্ছে নিউইয়কের্র আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীরা। এখানকার ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ বা ‘গণ সংবর্ধনা’র চরিত্র ও ধরণ দেখলেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়।
গত ১৯ জুন নিউইয়র্কে বিএনপির পল্লী উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক ও পঞ্চগড় জেলা বিএনপির সদস্য সচিব ফরহাদ হোসেন আজাদকে গণ সংবর্ধনা দিয়েছে নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন ইনক।
এই সংগঠনটি একটি আঞ্চলিক সংগঠন। অরাজনৈতিক সংগঠন। সব ধর্মের,সব রাজনৈতিক দলের মানুষরা এই সংগঠনের সদস্য। এই সংগঠনের পক্ষ থেকে কেন একজন রাজনৈতিক দলের নেতাকে সংবর্ধনা দিতে হবে ? তা হলে কি ধরে নিতে হবে, নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আঞ্চলিক সংগঠনের আবরণে রাজনীতির চাষ-বাস করছে ? সংগঠনকে রাজনৈতিক হীন স্বার্থে ব্যবহার করছে ?
১৯ জুন নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অতিথি এবং আলোচকদের নামের তালিকা দেখলেই স্পষ্ট হয়ে যায়, এরা বিএনপির নির্ভেজাল এবং পরীক্ষিত নেতা-কর্মী। অনুষ্ঠানের আলোচনার বিষয়ও ছিল বিশুদ্ধ রাজনীতি।
এখন প্রশ্ন হলো, বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের জেলাগুলো নিয়ে গঠিত নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের এ রকম সংবর্ধনা দেয়া কি সমুচিন ? অবশ্য এতে সংবর্ধিত ব্যক্তি ফরহাদ হোসেনের কোন ত্রæটি দেখছি না। কারণ তার আগে যারা বক্তব্য দিয়েছেন, তারা সবাই বিএনপির নেতা। স্বভাবত কারণেই তারা তাদের বক্তব্যে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান সরকারকে একহাত দেখিয়ে দিয়েছেন। জনাব ফরহাদ হোসেনেও বুঝতে পেরেছেন,তাকেও পূর্বসূরীদের পদাঙ্ক অনুসরণ করেই বক্তব্য দিতে হবে। তাই তিনি আয়োজকদের খুশী করতে সে রকমই বক্তব্য দিয়েছেন।
যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগও ঠিক একই কায়দায় নাগরিক সংবর্ধনা দেয়ার স্টাইল বজায় রেখেছে।
নিউইয়র্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আসলে যে নাগরিক সংবর্ধনার আয়োজন করে, সেটিও হয় চরম প্রহসণ এবং প্রতারণার। নামেই শুধু ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ হয়,কোন নাগরিক সেখানে থাকে না। একশত ভাগ হালাল আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের দখলে থাকে সংবর্ধনার আয়োজন। শুধু ‘আই ওয়াস’ করার জন্য আওয়ামী লীগের বাহিরের কিছু ব্যক্তির নাম বিজ্ঞাপনে রাখা হয়। অথচ বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী সবার। নাগরিক সংবর্ধনা সবাইকে নিয়ে করা উচিত। কিন্ত আওয়ামী দলীয় সংকীর্ণতার উর্দ্ধে উঠতে পারে না।
নর্থ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন যে স্টাইলে এবং যাদেরকে নিয়ে বিএনপি নেতা ফরহাদ হোসেন আজাদের গণ সংবর্ধনার আয়োজন করে, তাতে এই সংগঠনের নাম ‘নর্থ বেঙ্গল বিএনপি ফাউন্ডেশন’ হলেই ভালো হতো।
নিউইয়র্কে রাজনৈতিক দল,আঞ্চলিক,সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলো কেন ‘নাগরিক সংবর্ধনা’ বা ‘গণ সংবর্ধনা’র আয়োজন করে ? আসলে, বাংলাদেশীদের মধ্যে গণ সংবর্ধনা বা নাগরিক সংবর্ধনায় জড়িয়ে পড়ার পেছনে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ব্যক্তিগত স্বার্থ কাজ করে। বিদেশের মাটিতে ‘নেতা’ হওয়ার প্রবণতা থেকেও সংবর্ধনার আয়োজন করার আর একটি কারণ হতে পারে।
নিউইয়র্কে সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোকে রাজনীতির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার প্রবণতা আওয়ামী লীগ ও বিএনপির নেতা-কর্মীদের মধ্যে বেশি। বিদেশে বা উন্নত দেশে থাকলেও এদের আচরণে কোনো পরিবর্তন হয় না।
বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃত্বরা যে ভাবে সংগঠনকে নিজেদের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছেন, তাতে নতুন প্রজন্মরা তাদের অভিভাবক সম্পর্কে খারাপ ধারণা পাচ্ছে। নতুন প্রজন্মের ভাবনা ভিন্ন। অগ্রজ ও বয়স্কদের এই মানষিকতাকে নতুনরা পছন্দ করছে না ।
নিউইয়র্কের মাটিতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের উচিত,সংগঠনগুলোকে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার না করা। কিন্তু দেশে তো বটেই, বিদেশের মাটিতেও আমরা সভ্যতা-ভব্যতা শিখতে পারলাম না। রাজনৈতিক সংকীর্ণতার উপরে উঠতে পারলাম না।
অগ্রজদের কাজ হচ্ছে, নতুন প্রজন্মকে নৈতিক শিক্ষা দেয়া। ভবিষ্যত প্রজন্মকে শিক্ষা-সংস্কৃতিতে সমৃদ্ধ করা। কিন্ত নিউইয়র্কের অভিভাবক ও নেতারা প্রচন্ড ভাবে স্বার্থপর ও আত্মকেন্দ্রীক । এরা নিজেকে ছাড়া কিছুই বোঝেন না। ফলে এদের কাছে নতুন প্রজন্মের শেখার কিছু নেই। এই প্রবণাতা থেকে বেড়িয়ে আসতে না পারলে, আমাদের সন্তানদের সামনে অন্ধকার ছাড়া আর কিছুই থাকবে না।