বিনামূল্যের পাঠ্যবই: এনসিটিবির ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া উচিত

সন্ধান ২৪.কম:বিনামূল্যের পাঠ্যবই সরবরাহের বিষয়টি কাগজে-কলমে সম্পন্ন হলেও বাস্তবতা হলো, এখনো প্রায় অর্ধকোটি বই সরবরাহ করা সম্ভব হয়নি। এর মধ্যে মাধ্যমিক স্তরের বই বেশি। এছাড়া প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বইও আছে। অথচ শিক্ষাবর্ষ শুরুর পর ইতোমধ্যে পাঁচ সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে। এ অবস্থায় দ্রুত এ অভিযোগের সত্যতা যাচাই করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা উচিত। এছাড়া বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে নতুন করে যে বিতর্ক শুরু হয়েছে, সেটিরও সুরাহা হওয়া উচিত। জানা গেছে, নিম্নমানের কাগজে বই ছাপানোর অভিযোগ সামনে এনে একটি পক্ষ দু-একদিনের মধ্যে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের দাবি হলো, সরকারকে বিপাকে ফেলার উদ্দেশ্যেই মূলত এমন অভিযোগ আনা হচ্ছে। বস্তুত এ নিয়ে পালটাপালটি অভিযোগ এখন তুঙ্গে। জাতীয় পাঠ্যক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) অবশ্য এ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে বলেছে, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্তরের জন্য আলাদা দুটি স্বাধীন সংস্থা পরিদর্শন ও যাচাই কাজ করেছে। ফলে নির্ধারিত মানের বাইরে বই মুদ্রণ ও সরবরাহ করা সম্ভব নয়। তারপরও অভিযোগ খতিয়ে দেখার সুযোগ রয়েছে উল্লেখ করে প্রয়োজনে কোনো প্রতিষ্ঠানকে কালো তালিকাভুক্ত করাসহ বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে।

বিনামূল্যের পাঠ্যবই নিয়ে সিন্ডিকেটের তৎপরতা বহুদিনের। অভিযোগ রয়েছে, এর সঙ্গে এনসিটিবির লোকজন জড়িত থাকার কারণে প্রতিবছর নিম্নমানের বই সরবরাহ করা হলেও এ বিষয়ে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। ইতঃপূর্বে দেখা গেছে, প্রকাশিত পাঠ্যপুস্তকগুলোর মধ্যে কোথাও একটি অধ্যায়ের অর্ধেক নেই, আবার কোথাও এক পৃষ্ঠার সঙ্গে অপর পৃষ্ঠার কোনো মিল নেই। অতীতেও ভুলে ভরা পাঠ্যপুস্তক নিয়ে শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শিক্ষকদের বিড়ম্বনায় পড়তে হয়েছে বহুবার। বস্তুত সংশ্লিষ্টদের অবহেলা ও যথাযথ তদারকির অভাবেই পাঠ্যপুস্তক থেকে ভুল ও অসংগতি দূর হচ্ছে না। ভুলে গেলে চলবে না, শিক্ষার অপরিহার্য উপকরণ বই। সরকার স্কুল পর্যায়ে বিনামূল্যে বই দিচ্ছে। যথাসময়ে বই দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকার সফল। তবে সেসব বই যদি নানারকম ভুল ও অসংগতিতে ভরা থাকে, তাহলে এর চেয়ে দুর্ভাগ্যজনক আর কী হতে পারে!

দেশের শিক্ষার্থীদের মঙ্গলচিন্তার দায়িত্বভার যেহেতু এনসিটিবির হাতে ন্যস্ত, তাই শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার আগে এ ব্যাপারে তাদের ভূমিকা স্পষ্ট হওয়া উচিত। সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি শিক্ষার্থীদের হাতে সময়মতো নির্ভুল পাঠ্যপুস্তক তুলে দেওয়ার সক্ষমতা এতদিনেও কেন অর্জন করতে পারেনি, তা খতিয়ে দেখা উচিত। প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে ওঠা উল্লেখযোগ্য অভিযোগগুলোর মধ্যে রয়েছে-সেখানে যোগ্যতাসম্পন্ন ব্যক্তিদের দিয়ে বই লেখানো হয় না, বইয়ের অনুমোদন দিতে নানা অনিয়ম-দুর্নীতির আশ্রয় নেওয়া হয় ইত্যাদি। তবে এ কথাও সত্য, বিনামূল্যের পাঠ্যবই মুদ্রণ ও সরবরাহকে কেন্দ্র করে বিরাজমান অনিয়ম ও দুর্নীতি বন্ধের উদ্যোগ মূলত সরকারকেই নিতে হবে। দেশের যেসব স্থানে এখনো মাধ্যমিক ও প্রাক-প্রাথমিক স্তরের বই পৌঁছানো যায়নি, অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সেসব স্থানে বই পৌঁছানোর ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি দেশের বিপুলসংখ্যক শিক্ষার্থীর স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে সরকার নজর দেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Exit mobile version