সভ্য দেশে অসভ্যদের রাজত্ব

সাউথ আফ্রিকার মতো এখন ইউরোপের প্রাচীন সভ্যতার দেশ গ্রিসেও হামলা আর নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন অসহায় প্রবাসী বাংলাদেশীরা। গুম,খুন আর অপহরণের ঘটনা এখন নিত্য নৈমিত্তিক। ২০১২ সালের দিকে বর্ণবাদী দল নাৎসি বা নাজি “খ্রিসি আভগি”র আক্রমণের শিকার হয়ে অনেক প্রবাসী বাংলাদেশিসহ মধ্য প্রাচ্য ও এশিয়ান দেশ থেকে আসা অভিবাসন প্রত্যাশীরা গ্রীস ছেড়ে ফ্রান্স, ইতালি ও জার্মানির মতো উন্নত এবং নিরাপদ দেশগুলিতে পাড়ি জমিয়েছেন।

তখন হয়তো অনেকটা সহজ ছিল এক দেশে থেকে অন্য দেশে যাওয়া কিন্তু এখন আর সহজে কেহ যেতে পারছেন না, সব কয়টি বিমান বন্দরে কঠোর নিরাপত্তার কারণে ইমিগ্র্যাশন পুলিশের হাতে ধরা পড়ে গ্রিসে বিভিন্ন ডিটেনশন সেন্টারে জেল খাটছেন শতাধিক প্রবাসী বাংলাদেশি। তাই শত অত্যাচারের মুখে কোনো উপায়ন্তর না পেয়ে গ্রিসে আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন বিশেষ করে এথেন্সে বসবাসরত প্রবাসী বাংলাদেশী ও তাদের পরিবারেরা। ছিনতাইসহ বিনা অপরাধে নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা এবং গ্রিক সরকারের পক্ষ থেকে সঠিক বিচার পাওয়া যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার অঙ্গীকার করছে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন। যদিও বিদেশিদের ফোন পেলে বা কোনো দুর্ঘটনায় বিদেশি আহতের ঘটনায় হাজার দফা ফোন করেও পুলিশকে পাওয়া যায় না বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা। রেস্তোরাঁয় কাজ করেন এবং গভীর রাতে বাসায় ফিরেন এমন প্রবাসী বাংলাদেশিরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ছিনতাইসহ মারমুখী হামলার শিকার হচ্ছেন। রমজানের কিছুদিন আগে রাজধানীর পর্যটন কেন্দ্র “সিন্দাগমায়” অজ্ঞাত হামলাকারীদের হাতে আহত হয়েছেন নারায়ণগঞ্জবাসী কামরুল, যিনি এক মাসেরও বেশি সময় হাসপাতাল অজ্ঞান অবস্থায় চিকিৎসা নিয়েছেন। বর্তমানে যদিও উনি বাসায় অবস্থান করছেন কিন্তু এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠতে পারেননি। মনে করতে পারছেন না সত্যিকার অর্থে তার সাথে কি ঘটেছিল। তার সাথে একই বাসায় থাকা মেসমেম্বারদের সহায়তায় অনেক খোঁজাখুঁজির পর অচেতন অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় তাকে পাওয়া যায়। ঈদের দিন সকাল নয়টায় নামাজ শেষে এক পাকিস্তানি নাগরিক পায়জামা-পাঞ্জাবি পরে রাস্তায় বের হয়েছিলেন আর এমন সময় বর্ণবাদী এক ট্যাক্সি ড্রাইভার তাকে লক্ষ্য করে মাথায় গুলি করে,যদিও পরবর্তীতে পাকিস্তানি কমিউনিটি নেতাদের তৎপরতায় অপরাধী ট্যাক্সি ড্রাইভারকে পুলিশ গ্রেফতার করেছেন।
এখন কথা হলো একজন পাকিস্তানিকে হামলার চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে বর্ণবাদী গ্রিক নাগরিক অপরাধীকে শনাক্ত করে পুলিশ গ্রেফতার করছে, আর প্রতিদিন বাংলাদেশিদের সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনা অদৃশ্য কারণে রাস্তায় পড়ে পড়ে কাতরাচ্ছে। কিন্তু দুঃখের বিষয় অসহায়ত্বের আদলে জন্ম নেয়া বাঙালি জাতি ভীতু আর নির্বাক আর তা ছাড়া হামলার শিকার অধিকাংশ প্রবাসীরাই অনিয়মিত হওয়ায় পুলিশি মামলা- মোকদ্দমায় যেতে ভয় পান। বৈধ কোনো কাগজপত্র না থাকাতে দূতাবাসের সহায়তাও পাচ্ছেন না। প্রতিনিয়তই ঘটছে এরকম দু’একটি ঘটনা কিন্তু সকলেই বাংলাদেশি। এর কারণ কি ? কারণ পাকিস্তানিরাও বাংলাদেশিদের টার্গেট করে রাতের বেলা এমনকি দিনে দুপুরেও নির্জন স্থানে একা পেয়ে হামলা করে এবং ছিনিয়ে নেয় সর্বস্ব। এই ব্যাপারে বাংলাদেশ কমিউনিটি এবং দূতাবাসের সাথে যোগাযোগ করলে জানা যায় যে, কেউ যদি লিখিতভাবে অভিযোগ নিয়ে আসে তাহলে অবশ্যই হামলাকারীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ ও দূতাবাস কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে শুক্রবার রাত আনুমানিক ১২টার দিকে এথেন্সের ভিক্টোরিয়া ও লিসিয়ন রোড সংলগ্ন এলাকার একজন বাংলাদেশি দোকান ব্যবসায়ী দোকান বন্ধ করে বাসায় যাওয়ার পথে চার পাঁচজন জন আফগানী ছিনতাইকারীদের কবলে পড়ে গুরুতর আহত হয়েছেন। তাকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে তারা মোবাইল,টাকা পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী ছিনিয়ে নিতে চায় কিন্তু ব্যবসায়ী কোন কিছু দিতে রাজি হননি বিধায় ছিনতাইকারীরা ছুরিকাঘাত করে এবং এলোপাতাড়ি পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে সবকিছু নিয়ে রাস্তায় ফেলে চলে যায়।আহত লোকটির নাম ইকবাল হোসেন বলে জানা গেছে। তিনি এখন এথেন্সের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ছিনতাইকারীরা মুখোশ পড়া ছিল এবং তারা আফগানিস্তানের নাগরিক বলে জানিয়েছেন আহত ইকবাল হোসেন।

এথেন্স শহরে এই মুহূর্তে বাংলাদেশি নাগরিকদের মাঝে আতংক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রায় প্রতিদিন একাধিক বাংলাদেশি ব্যক্তি পাকিস্তানি, আলবেনিয়ান, আফগানিস্তান ও আলজেরিয়ান ছিনতাইকারীদের হাতে আহত হয়ে মোবাইল,টাকা-পয়সা ও মূল্যবান সামগ্রী হারাচ্ছেন। ছিনতাইয়ের শিকার হয়ে আট থেকে দশজন বাংলাদেশি বর্তমানে বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
চলাফেরায় সতর্ক হওয়াসহ নির্জন পরিবেশ এড়িয়ে চলার পরামর্শ সংশ্লিষ্ট মহলের।

Exit mobile version