৬০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স হারালো বাংলাদেশ

হাসান মাহমুদ

বাংলাদেশে কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে নিউইয়র্ক থেকে পাঠানো রেমিটেন্সের ওপর ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে জানা গেছে। নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স ব্যবসায়িরা ‘আজকাল’কে জানিয়েছেন, বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হবার পর থেকে প্রবাসিরা রেমিট্যান্স পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড বন্ধ হবার পর থেকে কোন রেমিট্যান্স আর পাঠানো সম্ভব হয়নি। স্বাভাবিক সময়ে প্রতি মাসে ২ বিলিয়ন ডলার কখনো কখনো এর চেয়েও বড় অংকের রেমিট্যান্স পাঠানো হয়েছে। তবে আন্দোলনমুখর গত ৭ দিনে ৫০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি রেমিট্যান্স হারিয়েছে বাংলাদেশ। যা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ। এই পরিমাণ অর্থ স্বাভাবিক ব্যাংকিং চ্যানেলে দেশে পাঠাবার কথা থাকলেও কোন রেমিট্যান্সই পাঠাতে পারেননি বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়িরা। এতো বিপুল পরিমাণ লোকসান অতিতে আর কোন সময়ে ঘটেনি বলেই তাদের অভিমত। গত কয়েকদিনে রেমিট্যান্স প্রবাহ কমতে কমতে প্রায় শূন্যের কোঠায় নেমে আসে। কোটা সংস্কারের দাবিতে গড়ে উঠা ছাত্র আন্দোলন যখন তুঙ্গে প্রবাসি সাধারণ মানুষ তখন থেকে ব্যাংকিং চ্যানেলে আর ডলার পাঠাতে আগ্রহি হচ্ছেন না বলে ব্যবসায়িরা জানান।

কিছু প্রবাসি দেশে ডলার পাঠাবার জন্য ব্যাংকিং চ্যানেলের পরিবর্তে অবৈধ হুন্ডির পথ বেছে নিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ব্যাংকিং চ্যানেল স্বাভাবিক গতি হারিয়েছে। কবে স্বাভাবিক উপায়ে ডলার পাঠানো যাবে তা নিয়ে শঙ্কাও বেড়েছে। প্রবাসিরা কষ্ট করে হলেও তাদের স্বজনদের চলতে পরামর্শ দিচ্ছেন।

নিউইয়র্কের রেমিট্যান্স ব্যবসায়িদের একমাত্র সংগঠন ‘এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান মানি ট্রান্সফার্স এন্ড এজেন্ট (এবিএএমটিএ)’-এর প্রেসিডেন্ট মাসুদ রানা তপন গতকাল বৃহস্পতিবার আজকালকে বলেন, ‘বাংলাদেশে ছাত্র আন্দোলন শুরু হবার পর থেকেই প্রবাসিরা ডলার পাঠানো কমিয়ে দিয়েছেন। ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ড বন্ধ হবার পর আর রেমিট্যান্স পাঠানো যায়নি। এখন খুব সামান্যই রেমিট্যান্স চালু হয়েছে। গত ৭ দিনে প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকার সমপরিমাণ রেমিট্যান্স হারিয়েছে দেশ। মানুষ অনেকটা ইচ্ছা করেই আর রেমিট্যান্স পাঠাতে আগ্রক বোধ করছেন না। তাদের মধ্যে একধরনের ক্ষোভ কাজ করছে বলে মনে হচ্ছে।’

‘এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশি আমেরিকান মানি ট্রান্সফার্স এন্ড এজেন্ট (এবিএএমটিএ)’-এর সাধারণ সম্পাদক এসএম মাঈনুদ্দিন পিন্টু বলেন, পরিস্থিতি এখনো স্বাভাবিক হয়নি। প্রবাসিরা অবৈধ হুন্ডির মাধ্যমে ডলার পাঠাতে চান এমন কথা শুনা যাচ্ছে। তবে হুন্ডিতে দেশে টাকা পাঠাতে যারা চান তারা অবৈধ এবং দুর্নীতিবাজদেরই সহযোগিতা করতে যাচ্ছে। পুরো পরিবেশ স্বাভাবিক হতে আরও এক সপ্তাহ সময় লাগবে বলে আমরা মনে করছি।’ তিনি জানান, গতকাল বৃহস্পতিবার বাংলাদেশে ডলারের রেট ছিল ১১৮ টাকা। প্রবাসিরা অবৈধ হুন্ডির পথকে বেছে নিলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে এ ব্যাপারে গুরুত্বসহকারে নজর দিতে হবে। তা না হলে এর নেতিবাচক প্রভাব গিয়ে পড়বে বাংলাদেশের রিজার্ভের ওপরে।’

বাংলাদেশে রেমিট্যান্স প্রবাহের বিরাট একটা অংশ পাঠিয়ে থাকেন বাংলাদেশি আমেরিকান প্রবাসিরা। ছাত্র আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে রেমিট্যান্সের গতি অনেক কমে গেছে বলে রেমিট্যান্স ব্যবসায়িরা জানিয়েছেন।

##
##

Exit mobile version