নিউইয়র্কে বিক্ষোভ: বঙ্গবন্ধু যাদুঘর গুড়িয়ে দেয়া দুশমনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা

সন্ধান২৪.কম: ঢাকায় ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বিনা উষ্কানীতে হামলা ও বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দেয়ার সংবাদে ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার সন্ধ্যায় হাড় কাঁপানো শীত উপেক্ষা করে  নিউইয়র্কে তাৎক্ষণিক এক প্রতিবাদ র‌্যালি করে । “মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ” নামক একটি নতুন সংগঠন এটির আয়োজন করে।

নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটসের ডাইভার সিটি প্লাজায় সন্ধ্যা ৬টায় মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ও বাংলাদেশের স্বাধীনতার চেতনাকে রক্ষা করার লক্ষ্যে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।

ডাইভার্সিটি প্লাজায় ‘রুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ শীর্ষক ব্যানারে মূল বক্তব্য প্রদানকালে প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ ক্ষুব্ধচিত্ত্বে বলেন, ‘একাত্তরে যুদ্ধ শুরু হয়েছিল বাংলাদেশ থেকে এবং সে যুদ্ধে সর্বাত্মক সমর্থন দিয়েছেন প্রবাসীরা। আজ সময় এসেছে প্রবাস থেকেই যুদ্ধ শুরু করার এবং এ যুদ্ধের বিস্তৃতি ঘটবে সারা বাংলায়। বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ধ্বংস করেছে যারা আমরা ওদেরকে ধ্বংস করবো। ওদের ভিডিও সংরক্ষণ করুন। আমরা আজ আনুষ্ঠানিকভাবে জানিয়ে দিতে চাই যে, ওদের প্রত্যেকের তালিকা আমরা করছি। তালিকানুযায়ী ওদের প্রত্যেককে নিধন করা হবে। নিশ্চিহ্ন করা হবে। কুলঙ্গার, জাতীয় শত্রু ড. ইউনূস-সহ প্রত্যেককে ধ্বংস করা হবে। যারা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সূতিকাগার ৩২ নম্বর বঙ্গবন্ধুৃ ভবনসহ বাঙালি চেতনায় ও মুক্তিযুদ্ধের স্থাপনায় আঘাত করেছে সেই জাতীয় দুশমনদের বিরুদ্ধে প্রবাসীরা আজ যুদ্ধ ঘোষণা করলো।’ উত্তর আমেরিকায় বাংলা ভাষার প্রথম নিয়মিত সাপ্তাহিক ‘প্রবাসী’র প্রতিষ্ঠাতা-সম্পাদক সৈয়দ মুহম্মদ উল্লাহ (৮৪) আরো বলেন, এবারের সংগ্রাম একাত্তরের শত্রুদের বিরুদ্ধে, এবারের সংগ্রাম বিদেশী শক্তির ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশের ক্ষমতায় আসিন ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে, ইউনূসের সাথে তার সমস্ত কুলঙ্গার সাথীদের বিরুদ্ধে। এ যুদ্ধ একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বিরোধিতাকারি-মানবতাবিরোধী অপরাধকারি জামাতের বিরুদ্ধে।’

বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘরের ধ্বংস করে জাতিকে ধংস করার ষড়যন্ত্র বলে ক্ষোভ প্রকাশ করে সুব্রত বিশ্বাস বলেন, বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর যা কেবল একটি ঐতিহাসিক স্থান নয় বরং বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার চেতনাকে সংরক্ষণের প্রতীক। এটি একটি সুস্পষ্ট চক্রান্ত, যেখানে স্বাধীনতা বিরোধী চক্র এবং উগ্র মৌলবাদীরা একাত্তরের পরাজিত শক্তির প্রতিশোধ নিতে একযোগভাবে কাজ করছে।

ওবায়দুল্লা মামুন বলেন, ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি সংরক্ষণের জন্য প্রতিষ্ঠিত ঐতিহাসিক ভবন ধ্বংসের মাধ্যমে মৌলবাদী শক্তি পাকিস্তানের ভাবধারাকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করছে। স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাসকে ধ্বংস করে জাতির মনোবল ভেঙে ফেলতে এই ধরনের ন্যক্কারজনক কাজ করা হচ্ছে। রাষ্ট্রীয় মদদে এমন অপরাধের যে ঘটনা ঘটছে, তা জাতির জন্য অশনি সংকেত।

শাহবাগের গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক সৈয়দ জাকির আহমেদ রনি বলেন, শুধু ৩২ নম্বর নয়, সারাদেশে সর্বদিকে সর্বপ্রান্তে কী এক অমোঘ চক্রান্তে, বিদ্বেষে নাম মুছে ফেলা হচ্ছে। আমরা তা বসে দেখছি। এটা নিলয়ের গল্পে মত। রোম যখোন পুড়ছিল নিলয় তখোন বাশী বাজাচ্ছিল। আমরা বাশী বাজাচ্ছি। আমরা বক্তৃতা করছি। আমাদের সাহস নেই রাস্তায় দাঁড়ানোর। তবে একটা সাহস আছে। আমাদের মনে রাখার সাহস আছে। আমরা বারবার পরাজিত হয়েছি, বারবার ফিরে এসেছি। বারবার আমরা পড়ে গেছি। বারবার আমরা উঠে দাঁড়িয়েছি। এবারও যদি আমাদেরকে পড়ে যেতে হয়, আবার আমরা উঠে দাঁড়াবো। যে সিগন্যাচার, যে স্বাক্ষর আপনারা রেখে গেলেন, তা আমাদের মনে রয়ে গেল। এর চ’ড়ান্ত পরিণতি কী হবে, জবাব কী হবে-সেটাও আমরা আপনাদের দেখিয়ে দেব। আজ থেকে সেই দেখানো আমরা শুরু করি। আপনারা আসুন আমরা জমায়েত হই, এগিয়ে যাই। আমরা আমাদের অধিকার সংরক্ষণে ঝাঁপিয়ে পড়ি।

রনি উল্লেখ করেন, ৫ ফেব্রুয়ারি ছিল গণজাগরণ মঞ্চের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী,জন্যে কিছুটা ভাবাবেগে ছিলাম। এমনি অবস্থায় ভোরে যখোন ঘুম ভাঙলো-আমরা দু:খে আক্রান্ত হলাম। আমরা টিভিতে দেখলাম-আমাদের স্বাধীনতা যুদ্ধের, স্বাধীনতা সংগ্রামের, আমাদের স্বাধিকার আন্দোলনের যে কেন্দ্রস্থল, সেই স্থানে একদল হিংস্র জানোয়ার তাদের যা কিছু আছে ঝাঁপিয়ে পড়েছে। কি অন্যায়, কি পাপ, কি অপরাধ, কীসের বিচার, কোথায় বিচার, আমরা কিছুই জানলাম না। আমরা দেখলাম আমাদের চোখের সামনে থেকে আমাদের স্বাধীনতার সূতিকাগার ৩২ নম্বরে একটা একটা করে ইট খুলে পড়ে যাচ্ছে। স্মৃতিকাতর প্রতিটি বস্তু আগুনে পুড়ে যাচ্ছে।

জাকির হোসেন বাচ্চু  তার বক্তব্যে প্রশ্ন করেন, এই দেশকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে? যেখানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে দেশ স্বাধীন হয়েছিল, সেখানে আজ সেই ইতিহাসকে মুছে ফেলার ষড়যন্ত্র চলছে। কারা করছে এসব এর হিসাব একদিন বাংলার মানুষকে দিতেই হবে।

আয়োজকদের অন্যতম সদস্য মুজাহিদ আনসারী সঞ্চালনা করতে গিয়ে বলেন, অবৈধ দখলদার স্বৈরাচার ইউনূসের প্রত্যক্ষ মদদে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সূতিকাগার ধানমন্ডির ঐতিহাসিক ৩২ নম্বরের বাড়িটি ভেঙে ফেলেছে। আজ জাতির জীবনে এক কালো দিন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতি বিজড়িত এই বাড়িটি বাঙালীর ইতিহাসের তীর্থস্থান। এই বাড়ীটি ধ্বংস করে ৭১ এর পরাজিত শক্তি নিজেরদেরকে বাংলাদেশের গণশত্রু হিসেবে আবারও প্রমান করলো।

আলী হাসান কিবরিয়া অনু বলেন, বঙ্গবন্ধু যাদুঘর ভেঙ্গে ইতিহাস ধংস করা যাবে না, ইতিহাস তার প্রতিশোধ নেবে। তিনি নৈরাজ্যের বাংলাদেশে মৌলবাদীদের এই তান্ডবের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্ববান জানান।

অন্যান্য বক্তরা বলেন,মুক্তিযুদ্ধের সূতিতাগার বঙ্গবন্ধুর স্মৃতির এই বাড়িটি ভেঙ্গে দিয়ে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব আর ঐতিহ্যের শিকড়েই কুঠারাঘাত করা হয়েছে। আর এসব দেখেও হাত গুটিয়ে রেখে ইউনুস সরকার এই ম্যারাথন তান্ডবকে সমর্থন দিয়েছে। বক্তরা বলেন,ইউনুস সরকারকে ভবিষ্যতে এর জন্য বিচারের কাঠগড়ায় উঠতে হবে।

অনুষ্ঠানের সমন্বয় করেন সনজীবন কুমার,মুজাহিদ আনসারী,জাকির হোসেন বাচ্চু ও জাকির আহমেদ রনি।

র‌্যালিতে জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু স্লোগানে নেতৃত্ব প্রদানকারিগণের মধ্যে আরো ছিলেন, গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম যোদ্ধা আল আমিন বাবু, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের যুক্তরাষ্ট্র শাখার সভাপতি আব্দুল কাদের মিয়া, সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য আফসার আহমেদ, অজিৎ ভৌমিক, রাজিব আহসান, আওয়ামী লীগ নেতা খালেদুজ্জামান প্রদীপ, দীনেশ মজুমদার, তুহিন মাহফুজ প্রমুখ।

‘ফাদার অব তালেবান-ইউনূস ইউনূস’, ‘কীলার অব বাংলা-ইউনূস ইউনূস’, ‘জয় বাংলা-জয় বঙ্গবন্ধু’ ‘রক্তের বন্যায়-ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘দিয়েছি তো রক্ত-আরো দেব রক্ত’, ‘‘একাত্তরের হাতিয়ার-গর্জে উঠুক আরেকবার’ ইত্যাদি স্লোগানে প্রকম্পিত হয়।

এই র‌্যালির পর একইস্থানে যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের উদ্যোগে আরেকটি প্রতিবাদ সমাবেশ হয়।

 

Exit mobile version