সন্ধান২৪.কম: হেলিকপ্টার দুর্ঘটনায় প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম রাইসির নিহত হওয়ার ঘটনায় সাধারণ ইরানিদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে বলে জানিয়েছে বার্তা সংস্থার রয়টার্স।
ইরানের ভেতর এবং বিদেশে নির্বাসিত দেশটির বিরোধীদলের নেতাদের কাছে ১৯৮০’র দশক থেকেই রাইসি একজন ঘৃণিত ব্যক্তি।
ইরানে ইসলামিক বিপ্লবের পর কয়েক হাজার ভিন্ন মতাবলম্বীকে বিনাবিচারে হত্যা করা হয়। যে হত্যাকাণ্ডে রাইসি নেতৃত্বের ভূমিকায় ছিলেন। ইরানের বর্তমান ক্ষমতাধররা অবশ্য কখনোই ওই গণহত্যার কথা স্বীকার করেনি। তবে অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলেছে, প্রায় পাঁচ হাজার ইরানি কিবং হয়তো তার থেকেও বেশি ভিন্ন মতাবলম্বী ইরানিকে ইসলামিক বিপ্লবের পর প্রথম এক দশকে হত্যা করা হয়।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও ইরানিদের মধ্যে হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে রাইসির মৃত্যুর ঘটনায় মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখাতে দেখা গেছে।
সোরান মনসুরনিয়া অনলাইনে এক পোস্টে বলেন, “গণহত্যার শিকারদের পরিবারকে আমি শুভেচ্ছা জানাচ্ছি।”
তবে নার্গিস নামে আরেক ইন্টারনেট ব্যবহারকারী লেখেন, “এটা শহিদী মৃত্যু।”
অনেক ইরানি বলেছেন, রাইসির মৃত্যু ইরানের চলমান শাসন ধারায় খুব সামান্য প্রভাবই ফেলবে বলে তাদের বিশ্বাস। বর্তমান শাসকরা তার জায়গায় এমন একজনকে আনবে যিনি হয়তো রাইসির মত কট্টোরপন্থি মনভাবেরই হবেন।
ইরানের মধ্যাঞ্চলের মরু নগরী ইয়াজেদের ৪৭ বছর বয়সী দোকানদার রেজা বলেন, “কার কী এসে যায়, একজন কট্টোরপন্থি মারা গেছেন, অন্য একজন তার জায়গায় আসবেন এবং আমাদের দেশের দুর্দশা একই থাকবে।
“এ ধরণের খবরে উদ্বিগ্ন হওয়ার মত সময় আমাদের হাতে নেই। কারণ, অর্থনৈতিক ও সামাজিক নানা কারণে আমাদের অনেক বেশি ব্যস্ত থাকতে হয়।”
সরকারের প্রতি অনুগত ইরানিরা মসজিদ এবং স্কয়ারগুলোতে জড়ো হয়ে রাইসি এবং তার সঙ্গে নিহত পররাষ্ট্রমন্ত্রী হোসেইন আমির আব্দুল্লাহিয়ানসহ বাকি সাতজনের জন্য প্রার্থনা করছেন। তাদের মৃত্যুতে সোমবার থেকে ইরানে পাঁচ দিনের রাষ্ট্রীয় শোক ঘোষণা করা হয়েছে। আর সাত দিন দেশটিতে সব ধরণের সাংস্কৃতিক ও বিনোদনমূলক অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
তবে ইরানের বেশিরভাগ দোকান সোমবার খোলাই ছিল। সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবন বাধাগ্রস্ত করার খুব একটা প্রচেষ্টা কর্তৃপক্ষের মধ্যে দেখা যায়নি বলেও জানায় রয়টার্স।
রাইসির আমলেই তেহরানে নীতি পুলিশের হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাশা আমিনির মৃত্যু গিয়ে ইরান জুড়ে তীব্র আন্দোলন গড়ে উঠেছিল। যে আন্দোলনের নেতৃত্বে ছিলেন নারীরা। হিজাব বিরোধী ওই আন্দোলন একসময় ইরানের কট্টোরপন্থি ইসলামিক শাসকদের বিরুদ্ধে এবং তাদের পতনের দাবিতে গণআন্দোলনে পরিণত হয়। যে আন্দোলন ১৯৭৯ সালের বিপ্লবের পর দেশটিতে সবচেয়ে বড় আন্দোলনে পরিণত হয়েছিল। কয়েক মাস ধরে সরকার পতনের দাবিতে ইরান জুড়ে ওই আন্দোলন চললেও শেষ পর্যন্ত রাইসি সরকারের কঠোর দমন-পীড়নে মাঝপথেই রণেভঙ্গ দিতে হয় আন্দোলনকারীদের। কয়েকশ বিক্ষোভকারী নিহত হন বলে জানায় নানা মানবাধিকার সংগঠন। গ্রেপ্তার করা হয় হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে।
তেহরানের বাসিন্দা লায়লা নামে ২১ বছর বয়সের এক শিক্ষার্থী ফোনে রয়টার্সকে বলেন, প্রেসিডেন্ট রাইসির মৃত্যুর খবরে তিনি দুঃখ পাননি।
“কারণ তিনি হিজাবের কারণে নারীদের উপর দমনপীড়নের নির্দেশ দিয়েছেন।
“তবে আমি এটা ভেবে দুঃখ পাচ্ছি যে এমনকি রাইসির মৃত্যুর পরও এ দেশে কোনো পরিবর্তনই আসবে না।”
২০২১ সালে ভোটের মাধ্যমে ইরানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছিলেন ৬৩ বছরের রাইসি। যদিও ওই ভোটের স্বচ্ছতা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে এবং ভোটার উপস্থিতিও অনেক কম ছিল।
তবে সব ইরানির মনোভাব লায়লার মত নয়। যেমন ২৮ বছর বয়সী তরুণ মোহাম্মদ হোসেইন জারাবি। প্রয়াত প্রেসিডেন্টের কাজের প্রংশসা করে তিনি রয়টার্সকে বলেন, “তিনি কঠোর পরিশ্রমী একজন প্রেসিডেন্ট ছিলেন। আমরা যতদিন বেঁচে থাকবো ততদিন তার আদর্শ ধারণ করে যাব।”
শিয়া মুসলমানদের পবিত্র নগরী কোম এর স্বেচ্ছাসেবী বাসিজ মিলিশিয়ার হয়ে কাজ করেন এই তরুণ।
২০২০ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের এক হামলায় নিহত হয়েছিলেন ইরানের অভিজাত রেভল্যুশনারি গার্ড এর জ্যেষ্ঠ কমান্ডার কাসেম সুলেইমানি। তার মৃত্যুতে ইরান জুড়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে শোকের যে মাতম হয়েছিল তেমনটা রাইসির বেলা দেখা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছে রয়টার্স।