স ম্পা দ কী য়
আজ বিজয়া দশমী। শারদীয় দুর্গাপূজা ও আনন্দ উৎসবের আজ সমাপনী দিবস। দুর্গাপূজা বাঙালি হিন্দুদের একান্তই নিজস্ব ধ্যান-ধারণাসম্ভূত। এ উপমহাদেশে হিন্দু সম্প্রদায়ের দেবার্চনার রীতিনীতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে বাঙালি হিন্দু সম্প্রদায়ের একটা বড় তফাৎ হলো দুর্গাপূজার সামাজিক চরিত্রটি। বাংলার প্রকৃতি, বাংলার ঋতুর ছাপটি সেখানে স্পষ্ট।
শরৎকালের কাশ-শুভ্র রূপ, আকাশে সাদা মেঘের ভেলা, শস্যভারাবনত মাঠ, কানায় কানায় পূর্ণ নদীস্রোত- সব মিলিয়ে এক উৎসবের আবহের মধ্যে বাঙালির দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হয়। হয়তো তাই ধর্মীয় অনুষ্ঠানের গণ্ডি ছাড়িয়ে দুর্গাপূজার উৎসবের রূপটিই বাঙালির হৃদয়ে স্থান করে নিয়েছে।
দুর্গাপূজার ধর্মীয় দিকটি হলো অশুভ শক্তির বিরুদ্ধে সকল শুভশক্তির ঐক্যের মাধ্যমে জয়লাভের প্রতীক। আর সামাজিকভাবে ধর্ম-বর্ণের গণ্ডি ছাড়িয়ে কন্যার পিতৃগৃহে আগমন উপলক্ষে আনন্দ উৎসব। দুর্গাপূজা সমাপনী দিবসে সবার মঙ্গল কামনায় শান্তিবারি ছিটানো হয়। তারপর প্রতিমা নিরঞ্জন করা হয় পুকুরে বা নদীতে।
দুর্গোৎসব বাঙালির জীবনে নিছক একটি সম্প্রদায়ের ধর্মানুষ্ঠান হিসেবেই প্রকাশিত নয়। এটি ব্যক্তিগত বা সম্প্রদায়গত আয়োজন ছাড়িয়ে সমাজ জীবনে পা রেখেছে। পূজা হিসেবে শুধু বাঙালি হিন্দুর আঙিনাজুড়ে থাকলেও উৎসব হিসেবে সমাজ জীবনে সব বাঙালিকে স্পর্শ করে। বিয়ে হয়ে যাওয়া বধূরূপী মেয়েটির বাপেরবাড়ি ফিরে আসার মুহূর্তটি বাঙালি সমাজ মানসে এক আবহমান আমেজ সৃষ্টি করে। সার্বজনীন দুর্গোৎসব উপলক্ষে জাত-পাতের ব্যবধান ঘুচিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বী সবাই একত্রিত হয়। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানাদিতে মিলিত হয় হিন্দু-মুসলমান-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান নির্বিশেষে সবাই।
আজকের বাংলাদেশে লোভ অতলস্পর্শী হয়ে উঠেছে। সন্ত্রাসী দস্যুতা পুরাণে বর্ণিত অসুরের অত্যাচার-নিপীড়নকে ছাড়িয়ে জনজীবনকে ত্রাসিত-উৎপীড়িত করছে। মূল্যবোধহীন রোবটসুলভ জীবনযাত্রার দাপটে সমাজ বিক্ষুব্ধ। সকল ধর্মেই অন্যায়, অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদের কথা রয়েছে। সেখানে শুভবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের মুক্তির আকাক্সক্ষার প্রতীক হিসেবে এ শক্তির আরাধনাকে কল্পনা করা যেতে পারে। কবির ভাষায় এ অসহনীয় পরিস্থিতি থেকে মুক্তির জন্য এ আহ্বান জরুরি হয়ে উঠেছে- ‘ওরে হত্যা নয়, আজ সত্যাগ্রহ শক্তির উদ্বোধন।’
পূজা অর্চনা শেষে শুভশক্তির জয়ের প্রতীক হিসেবে বিজয়া দশমীকে দেখা হয় শান্তি ও মৈত্রীর সূচনা হিসেবে। শান্তি অর্জন ও স্থাপন হিংসা-দ্বেষ-হানাহানি দিয়ে সম্ভব নয়। তাই বিজয়া দশমীর দিন পূজা সমাপনান্তে শান্তিবারি ছিটানো হয়। এটাও এক ধরনের প্রতীকী অনুষ্ঠান ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সবার শান্তি কামনার। সবার সঙ্গে সৌহার্দ্য, কারও প্রতি দ্বেষ বা হিংসা নয়। শত্রুকে জয় করার প্রধান হাতিয়ার মৈত্রী ও শান্তি। আজ বিজয়া দশমীতে সেই মৈত্রী ও শান্তি সবার জীবনে মূর্ত হয়ে উঠুক।